গানভঙ্গ
গাহিছে কাশীনাথ নবীন যুবা,    ধ্বনিতে সভাগৃহ ঢাকি,
কণ্ঠে খেলিতেছে সাতটি সুর    সাতটি যেন পোষা পাখি।
শানিত তরবারি গলাটি যেন    নাচিয়া ফিরে দশ দিকে—
কখন কোথা যায় না পাই   দিশা,    বিজুলি - হেন ঝিকিমিকে।
আপনি গড়ি তোলে বিপদজাল,    আপনি কাটি দেয় তাহা—
সভার লোকে শুনে অবাক মানে,    সঘনে বলে’ বাহা বাহা’।
 
কেবল বুড়া রাজা প্রতাপ রায়    কাঠের মতো বসি আছে,
বরজলাল ছাড়া কাহারও গান     ভালো না লাগে তার কাছে।
বালকবেলা হতে তাহারি গীতে    দিল সে এতকাল যাপি—
বাদল - দিনে কত মেঘের গান,    হোলির দিনে কত কাফি।
গেয়েছে আগমনী শরৎপ্রাতে,     গেয়েছে বিজয়ার গান—
হৃদয় উছসিয়া অশ্রুজলে    ভাসিয়া গিয়াছে দুনয়ান ।
যখনি মিলিয়াছে বন্ধুজনে    সভার গৃহ গেছে পুরে ,
গেয়েছে গোকুলের গোয়াল - গাথা    ভূপালি মূলতানি সুরে।
ঘরেতে বারবার এসেছে কত     বিবাহ - উৎসবরাতি,
পরেছে দাসদাসী লোহিত বাস,   জ্বলেছে শত শত বাতি—
বসেছে নব বর সলাজ মুখে    পরিয়া মণি - আভরণ,
করিছে পরিহাস কানের কাছে     সমবয়সী প্রিয়জন,
সামনে বসি তার বরজলাল   ধরেছে শাহানার সুর—
সে - সব দিন আর সে - সব গান    হৃদয়ে আছে পরিপূর।
সে ছাড়া কারো গান শুনিলে তাই    মর্মে গিয়ে নাহি লাগে,
অতীত প্রাণ যেন মন্ত্রবলে    নিমেষে প্রাণে নাহি জাগে।
প্রতাপ রায় তাই দেখিছে শুধু    কাশীর বৃথা মাথা নাড়া
সুরের পরে সুর ফিরিয়া যায়,    হৃদয়ে নাহি পায় সাড়া।
 
থামিল গান যবে, ক্ষণেক - তরে    বিরাম মাগে কাশীনাথ—
বরজলাল - পানে প্রতাপ রায়    হাসিয়া করে আঁখিপাত।
কানের কাছে তার রাখিয়া মুখ    কহিল,’ ওস্তাদজি,
গানের মতো গান শুনায়ে দাও,    এরে কি গান বলে ! ছি!