কাহিনী
এ যেন পাখি লয়ে বিবিধ ছলে শিকারী বিড়ালের
খেলা।
সেকালে গান ছিল, একালে হায় গানের বড়ো
অবহেলা। '
বরজলাল বুড়া শুক্লকেশ, শুভ্র উষ্ণীষ শিরে
,
বিনতি করি সবে সভার মাঝে আসন নিল ধীরে ধীরে
।
শিরা - বাহির - করা শীর্ণ করে তুলিয়া নিল
তানপুর,
ধরিল নতশিরে নয়ন মুদি ইমনকল্যাণ সুর।
কাঁপিয়া ক্ষীণ স্বর মরিয়া যায় বৃহৎ
সভাগৃহকোণে,
ক্ষুদ্র পাখি যথা ঝড়ের মাঝে উড়িতে নারে
প্রাণপণে।
বসিয়া বাম পাশে প্রতাপ রায় দিতেছে শত উৎসাহ
—
‘ আহাহা, বাহা বাহা! ' কহিছে কানে, ‘ গলা ছাড়িয়া গান গাহ। '
সভার লোকে সবে অন্যমনা — কেহ বা কানাকানি করে,
কেহ বা তোলে হাই, কেহ বা ঢোলে, কেহ বা চলে যায় ঘরে।
‘ ওরে রে আয় লয়ে তামাকু পান ' ভৃত্যে ডাকি কেহ কয়।
সঘনে পাখা নাড়ি কেহ বা বলে, ‘ গরম আজি অতিশয়। '
করিছে আনাগোনা ব্যস্ত লোক, ক্ষণেক নাহি
রহে চুপ।
নীরব ছিল সভা, ক্রমশ সেথা শব্দ ওঠে শতরূপ
।
বুড়ার গান তাহে ডুবিয়া যায়, তুফান - মাঝে
ক্ষীণ তরী —
কেবল দেখা যায় তানপুরায় আঙুল কাঁপে থরথরি।
হৃদয়ে যেথা হতে গানের সুর উছসি
উঠে নিজসুখে
হেলার কলরব শিলার মতো চাপে সে উৎসের মুখে।
কোথায় গান আর কোথায় প্রাণ দু দিকে ধায় দুই
জনে,
তবুও রাখিবারে প্রভুর মান বরজ গায় প্রাণপণে
।
গানের এক পদ মনের ভ্রমে হারায়ে গেল কী
করিয়া —
আবার তাড়াতাড়ি ফিরিয়া গাহে, লইতে চাহে
শুধরিয়া।
আবার ভুলে যায় পড়ে না মনে, শরমে মস্তক
নাড়ি
আবার শুরু হতে ধরিল গান — আবার ভুলি দিল ছাড়ি।
দ্বিগুণ থরথরি কাঁপিছে হাত, স্মরণ করে
গুরুদেবে।
কণ্ঠ কাঁপিতেছে কাতরে, যেন বাতাসে দীপ
নেবে - নেবে।
গানের পদ তবে ছাড়িয়া দিয়া রাখিল সুরটুকু
ধরি —
সহসা হাহারবে উঠিল কাঁদি গাহিতে
গিয়া হা - হা করি।