আম্রবন
সে বৎসর শান্তিনিকেতন-আম্রবীথিকায় বসন্ত-উৎসব হয়েছিল। কেউ-বা চিত্রে কেউ বা কারুশিল্পে কেউ বা কাব্যে আপন অর্ঘ্য এনেছিলেন। আমি ঋতুরাজকে নিবেদন করেছিলেম কয়েকটি কবিতা, তার মধ্যে নিম্নলিখিত একটি। সেদিন উৎসবে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, এই আম্রবনের সঙ্গে আমার পরিচয় তাঁদের সকলের চেয়ে পুরাতন— সেই আমার বালককালের আত্মীয়তা এই কবিতার মধ্যে আমার জীবনের পরাহ্নে প্রকাশ করে গেলেম। এই আম্রবনের যে নিমন্ত্রণ বালকের চিরবিস্মিত হৃদয়ে এসে পোঁছেছিল আজ মনে হয় সেই নিমন্ত্রণ যেন আবার আসছে মাটির মেঠো সুর নিয়ে, রৌদ্রতপ্ত ঘাসের গন্ধ নিয়ে, উত্তেজিত শালিখগুলির কাকলিবিক্ষুব্ধ অপরাহ্নের অবকাশ নিয়ে।

তব পথচ্ছায়া বাহি বাঁশরিতে যে বাজালো আজি
              মর্মে তব অশ্রুত রাগিণী,
                       ওগো আম্রবন,
তারি স্পর্শে রহি রহি আমার ও হৃদয় উঠে বাজি —
              চিনি তারে কিংবা নাহি চিনি,
                          কে জানে কেমন!
অন্তরে অন্তরে তব যে চঞ্চল রসের ব্যগ্রতা
       আপন অন্তরে তাহা বুঝি,
                 ওগো আম্রবন।
তোমার প্রচ্ছন্ন মন আমারি মতন চাহে কথা —
মঞ্জরিতে মুখরিয়া আনন্দের ঘনগূঢ় ব্যথা ;
                 অজানারে খুঁজি
       আমারই মতন আন্দোলন।
 
সচকিয়া চিকনিয়া কাঁপে তব কিশলয়রাজি
       সর্ব অঙ্গে নিমেষে, নিমেষে,
                 ওগো আম্রবন।
আমিও তো আপনার বিকশিত কল্পনায় সাজি
       অন্তর্লীন আনন্দ-আবেশে
                 অমনি নূতন।
প্রাণে মোর অমনি তো দোলা দেয় সন্ধ্যায় উষায়
       অদৃশ্যের নিশ্বসিত ধ্বনি,
                 ওগো আম্রবন।