প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নির্জন রামগিরি শিখরে মরে ফিরি একাকী দূরবাসী প্রিয়াহারা
যেথায় শীতল ছায় ঝরনা বহি যায় সীতার স্নানপূত জলধারা।
মাস পরে কাটে মাস, প্রবাসে করে বাস প্রেয়সীবিচ্ছেদে বিমলিন;
কনকবলয়-খসা বাহুর ক্ষীণ দশা, বিরহদুখে হল বলহীন।
একদা আষাঢ় মাসে প্রথম দিন আসে, যক্ষ নিরখিল গিরি’পর
ঘনঘোরে মেঘ এসে লেগেছে সানুদেশে, দন্ত হানে যেন করিবর।
উপরের প্রবন্ধে লিখেছি ‘আঁধার রজনী পোহালো’ গানটি নয় মাত্রার ছন্দে রচিত।
ছন্দতত্ত্বে প্রবীণ অমূল্যবাবু ওর নয়-মাত্রিকতার দাবি একেবারে নামঞ্জুর করে দিলেন। আর কারো হাত থেকে এ রায় এলে তাকে আপিল করবার যোগ্য বলেও গণ্য করতুম না, এ ক্ষেত্রে ধাঁধা লাগিয়ে দিলে। রাস্তার লোক এসে যদি আমাকে বলে তোমার হাতে পাঁচটা আঙুল নেই, তাহলে মনে উদ্বেগের কোনো কারণ ঘটে না। কিন্তু, শারীরতত্ত্ববিদ্ এসে যদি এই সংবাদটা জানিয়ে যান তাহলে দশবার করে নিজের আঙুল গুনে দেখি, মনে ভয় হয়, অঙ্ক বুঝি ভুলে গেছি। অবশেষে নিতান্ত হতাশ হয়ে স্থির করি, যে-কটাকে এতদিন আঙুল বলে নিশ্চিন্ত ছিলুম বৈজ্ঞানিক মতে তার সব-কটা আঙুলই নয়; হয়তো শাস্ত্রবিচারে জানা যাবে যে, আমার আঙুল আছে মাত্র তিনটি, বাকি দুটো বুড়ো আঙুল আর কড়ে আঙুল, তারা হরিজন-শ্রেণীয়।
বর্তমান তর্কে আমার মনে সেইরকম উদ্বেগ জন্মেছে। ‘আঁধার রজনী পোহালো’ চরণের মাত্রাসংখ্যা যেদিক্ থেকে যেমন করে গনে দেখি, নয়মাত্রায় গিয়ে ঠেকে। অমূল্যবাবু বললেন, এটা তো নয় মাত্রার ছন্দ নয়ই, বাংলাভাষায় আজো নয়মাত্রার উদ্ভব হয় নি, হয়তো নিরবধিকালে কোনো এক সময়ে হতেও পারে। তিনি বলেন, বাংলা ছন্দ দশমাত্রাকে মেনেছে, নয়মাত্রাকে মানে নি। এ কথায় আরো আমার ধাঁধা লাগল।
অমূল্যবাবু পরীক্ষা করে বলছেন, এ ছন্দে জোড়ের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ‘আঁধার রজনী’ পর্যন্ত এক পর্ব, এইখানে একটা ফাঁক; তারপরে ‘পোহালো’ শব্দে তিন মাত্রার একটা পঙ্গু পর্বাঙ্গ; তার পরে পুরো যতি। অর্থাৎ, এ ছন্দে ছয় মাত্রারই প্রাধান্য। এর ধড়টা ছয় মাত্রার, ল্যাজটা তিন মাত্রার। চোখ দিয়ে একপঙ্ক্তিতে নয় মাত্রা দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু অমূল্যবাবুর মতে, কান দিয়ে দেখলে ওর দুটো অসমান ভাগ বেরিয়ে পড়ে।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমার অঙ্কবিদ্যায় আমি যে-সংখ্যাকে ‘নয়’ বলি অমূল্যবাবুর অঙ্কশাস্ত্রেও তাকেই ‘নয়’ বলে বটে, কিন্তু ছন্দের মাত্রানির্ণয় সম্বন্ধে তাঁর পদ্ধতির সঙ্গে আমার পদ্ধতির মূলেই প্রভেদ আছে। কথাটা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
পৃথিবী চলছে, তার একটা ছন্দ আছে। অর্থাৎ, তার গতিকে মাত্রাসংখ্যায় ভাগ করা যায়। এই ছন্দের পূর্ণায়তনকে নির্ণয় করব কোন্ লক্ষণ মতে। পৃথিবী নিয়মিত কালে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আমাদের পঞ্জিকা-অনুসারে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করে চৈত্রসংক্রান্তিতে তার আবর্তনের এক পর্যায় শেষ হয়, তার পরে আবার সেই পরিমিতকালে পয়লা বৈশাখ থেকে পুনর্বার তার আবর্তন শুরু হয়। এই পুনরাবর্তনের দিকে লক্ষ্য করে আমরা বলতে পারি,পৃথিবীর সূর্যপ্রদক্ষিণের মাত্রাসংখ্যা ৩৬৫ দিন।