সাময়িক সারসংগ্রহ
অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ অথবা উপনিবেশ স্থাপনকালে য়ুরোপীয়েরা আজ অনিয়ন্ত্রিত বর্বরতার সহস্র পরিচয় দিয়া থাকে। নাইট্‌ নামক এক ইংরাজ ভ্রমণকারী অল্পদিন হইল কাশ্মীর ও তাহার উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে ভ্রমণ করিতেছিল—সেই ব্যক্তি “Where three empires meet” নামক এক ভ্রমণবৃত্তান্ত রচনা করিয়াছে, তাহাতে স্বজাতি সম্বন্ধে ইংরাজের অপরিমেয় অন্ধ অহংকার, এবং দেশীয়দের প্রতি তাহার অত্যুগ্র অশিষ্ট ঔদ্ধত্য পদে পদে প্রকাশ পাইতেছে। ইংরাজ ভ্রমণকারীদের অনেক গ্রন্থেই ইহা দেখিতে পাওয়া যায়। যদি ইংরাজকে উচ্চতর মনুষ্যত্বের পথে রক্ষা করিতে হয়, যদি তাহার অন্তর্নিহিত পাশবতাকে প্রশ্রয় না দিয়া দমন করা আবশ্যক বোধ কর—তবে কাঁদিয়া অভিমান করিয়া গভর্নমেন্টের দোহাই পাড়িয়া তাহা কদাচ হইবে না। বল ব্যতীত পশুত্বের প্রতিষেধক আর কিছুই নাই। আমরা যখন অপমান কিছুতেই সহ্য করিব না, অন্যায় প্রতিকারের জন্য প্রাণ দিতে কুণ্ঠিত হইব না তখন ইংরাজ আপন পাশবতাকে শৃঙ্খলিত করিয়া রাখিবে এবং আমাদিগকে সম্মান করিতে শিখিবে।

ইংলন্ডে ও ভারতবর্ষে সমকালীন সিবিল সর্বিস পরীক্ষা

হাউস্‌ অফ্‌ কমন্স্‌ সভার অর্ডর-বুকে ভারতবর্ষে ও ইংলণ্ডে একই সময়ে সিবিল সর্বিস্‌ পরীক্ষা প্রচলন সম্বন্ধে দাদাভাই নওরোজি-কর্তৃক নিম্নলিখিত মোশনের বিজ্ঞাপন বাহির হইয়াছে। এক্ষণে সাধারণ ভারতবাসীর নিকট নিবেদন, তাঁহারা এ সম্বন্ধে প্রচুর স্বাক্ষরসমেত বহুল আবেদনপত্র শ্রীযুক্ত দাদাভাই নওরোজির যোগে পার্লামেন্টে প্রেরণ করিলে কার্যসিদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

মোশনের বিজ্ঞাপন

মিস্টার নওরোজি—সিবিল সর্বিস্‌ (ইন্ডিয়া) (ইংলন্ডে এবং ভারতবর্ষে সমকালীন প্রকাশ্য পরীক্ষা)—যে, এই সভার মতে ব্রিটিশ প্রতাপের স্থায়িত্ব এবং ভারতবাসীর রাজভক্তি, রাজবিশ্বাস এবং কৃতজ্ঞতা রক্ষা করিতে হইলে, তাহাদের আর্থিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন করিতে হইলে, সমস্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্য ও শিল্পের বহুল পরিমাণে বিস্তার করিতে হইলে ১৮৩৩ খৃস্টাব্দের অ্যাক্টের প্রতিজ্ঞা সকল, সিপাই বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খৃস্টাব্দের ঘোষণাপত্র, দিল্লির দরবারে সম্রাজ্ঞী উপাধিধারণকালীন ১৮৭৭ খৃস্টাব্দের ঘোষণাপত্র, এবং মহামহিমান্বিতা রাজ্ঞী ও ভারতসম্রাজ্ঞীর পঞ্চাশৎবার্ষিক রাজ্যাভিষেক উৎসব-ঘোষণাপত্রগুলির পুনঃপ্রতিশ্রুতি অনুসারে, রাষ্ট্রনীতির অন্যান্য সংস্কার সাধনের মধ্যে, ৩রা জুন ১৮৯৩ খৃস্টাব্দে বর্তমান সভা-কর্তৃক নিম্নলিখিত রেজোল্যুশন গ্রাহ্য হইয়াছিল তাহাকে কার্যে পরিণত করা আবশ্যক :-

যে, এ পর্যন্ত ভারতবর্ষীয় সিবিল সর্বিস পদপ্রাপ্তির জন্য একমাত্র ইংলন্ডে যে প্রকাশ্য পরীক্ষাসকল নির্ধারিত ছিল এক্ষণ হইতে তাহা ভারতবর্ষ এবং ইংলন্ড উভয়ত্রই সম্পাদিত হইতে থাকিবে—এই-সকল পরীক্ষা উভয় দেশেই সমান প্রকৃতির হইবে এবং যাঁহারা পরীক্ষা দিবেন তাঁহারা সকলেই যোগ্যতা অনুসারে এক তালিকায় শ্রেণীভুক্ত হইতে থাকিবেন।

মতের আশ্চর্য ঐক্য

পাঠকদের স্মরণ আছে বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের প্রথম বার্ষিক অধিবেশন সভায় ‘সাধনা’-সম্পাদক “বাংলা জাতীয় সাহিত্য” নামক একটি প্রবন্ধ পাঠ করিয়াছিলেন। গত জ্যৈষ্ঠ মাসের ‘সাহিত্য’ পত্রে আমাদের বান্ধব শ্রীমান যোগিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় তাহার প্রতিবাদ করিয়া আমাদিগকে সম্মানিত করিয়াছেন। তিনি অত্যন্ত সরলভাবে ‘অনুমান’ করিয়া লইয়াছেন যে, যাহাতে ‘গ্রন্থকারদের ভিক্ষার কিঞ্চিৎ অর্থ সমাগমেরও সম্ভাবনা হয়’ আমাদের পঠিত প্রবন্ধের এমন গোপন উদ্দেশ্যও থাকিতে পারে। আমাদের ‘মাতৃভাষাবৎসলতার ঠাট’ যে ‘অলীক’ তাহাও তাঁহার সুতীক্ষ্ণ এবং উদার অনুমানশক্তির নিকট ধরা পড়িয়াছে। এ সম্বন্ধে শ্রীমান