প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
এতকাল এই সোশ্যালিজ্ম্ মত প্রায় নাস্তিকতায় সহচরস্বরূপে ছিল। প্রায় সমস্ত সোশ্যালিস্ট পত্রই নাস্তিকতার গোঁড়ামি প্রচার করিয়া আসিতেছেন। সম্প্রতি একটা পরিবর্তন দেখা যাইতেছে। রোমান-ক্যাথলিক ধর্মমণ্ডলী এই মতের প্রতি পক্ষপাত করিতেছে।
ইহাতে সোশ্যালিজ্মের বল কত বাড়িয়া উঠিতেছে তাহা বলা বাহুল্য। রোমান-ক্যাথলিকমণ্ডলীর অধিপতি পোপ লিয়ো অল্পদিন হইল তীর্থযাত্রী একদল ফরাসি মজুরদের সম্বোধন করিয়া আপনার অনুকূল মত প্রকাশ করিয়াছেন।
ইহা একটি লক্ষণস্বরূপ ধরা যাইতে পারে। রোমান-ক্যাথলিক সম্প্রদায় প্রায়ই প্রবল পক্ষকে আশ্রয় করিয়া বললাভ করিবার চেষ্টা করিয়া থাকে। রোমের মোহন্তটি য়ুরোপের নাড়ী টিপিয়া বসিয়া আছেন। সোশ্যালিজ্মের আসন্ন উন্নতি ও ব্যপ্তি নিশ্চিত অনুমান না করিলে তাঁহারা যে সহসা ইহার প্রতি প্রকাশ্য প্রসন্নতা দেখাইতেন ইহা তেমন সম্ভবপর বোধ হয় না; তাঁহারা এমন বালুকার’পরে কখনোই চরণক্ষেপ করিতেন না যাহা দুই দণ্ডে ধসিয়া যাইবে।
বিখ্যাত আমেরিকান কবি লোয়েল তাঁহার কোনো কবিতায় লিখিয়াছেন, আমেরিকার দক্ষিণ হইতে উত্তর সীমা পর্যন্ত এই সমগ্র বৃহৎ জাতি রক্তের গন্ধ ভালোবাসে। একজন ইংরাজ লেখক নবেম্বর মাসের ‘কন্টেম্পোরারি রিভিয়ু’ পত্রিকায় এই কথার সাক্ষ্য দিয়াছেন। তিনি বলেন, যাহারা কখনো আমেরিকায় পদার্পণ করে নাই, বহি পড়িয়া আমেরিকান সভ্যতা সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করিয়াছে তাহারা কল্পনা করিতে পারে না আমেরিকায় জীবনের মূল্য কত যৎসামান্য এবং সেখাকার লোকেরা খুন অপরাধকে কত তুচ্ছ মনে করে। প্রথমত, সকল দেশেই যে-সকল কারণে কম-বেশি খুন হইয়া থাকে আমেরিকাতেও তাহা আছ। দ্বিতীয়ত, সেখানে অধিকাংশ লোকেই অস্ত্র বহন করিয়া বেড়ায় এবং সামান্য কারণে তাহা ব্যবহার করিতে কুণ্ঠিত হয় না। দুই-একটা দৃষ্টান্ত দেখানো যাইতে পারে। কালিফর্নিয়া বিভাগের সুপ্রীমকোর্টের এক জজ রেলোয়ে স্টেশনের ভোজনশালায় খাইতে বসিয়াছেন, আদালতের আর-একটি উচ্চ কর্মচারী তাঁহার সঙ্গী ছিল। ইতিমধ্যে এক বারিস্টার পূর্বকৃত অপমান স্মরণ করিয়া জজের সহিত বিবাদ বাধাইয়া দেন, এমন-কি, তাঁহার গায়েও হাত তোলেন। অন্য কর্মচারীটি তৎক্ষণাৎ পিস্তল ছুড়িয়া বারিস্টারকে বধ করিলেন, এমন-কি, সে মরিয়া পড়িয়া গেলেও তাহাকে আর এক গুলি মারিলেন। বারিস্টারের স্ত্রী চিৎকার করিয়া গাড়িতে ফিরিয়া গেলেন। ইঁহারা তাঁহাকে ধরিয়া তাঁহার মাল অনুসন্ধান করিয়া একটি পিস্তল বাহির করিলেন। জুরিরা তাহাই দেখিয়া অপরাধীকে খালস দিল; কারণ এই পিস্তল দিয়া জজকে খুন করা নিতান্ত অসম্ভব ছিল না। সকলেই এই আইনের, এই বিচারের, এই কর্মচারীর সতর্কতার বিস্তর প্রশংসা করিল। পুলিসের হাতেও সর্বদা অস্ত্র থাকে এবং তাহাদের দ্বারা শত শত অন্যায় খুন ঘটিয়া থাকে। নিউইয়র্ক শহরে একজন পুলিসম্যান খবর পাইল একজন চোর অমুক রাস্তা দিয়া পলাইতেছে। অনুসন্ধান করিতে গিয়া দেখিল, একজন লোক কোনো বাড়ির সিঁড়ির উপর ঘুমাইতেছিল, গোলেমালে জাগিয়া উঠিয়া পলাইতে উদ্যত হইল। পুলিসম্যান তৎক্ষণাৎ তাহাকে লক্ষ্য করিয়া গুলি করিল। গুলি দৈবাৎ তাহাকে না লাগিয়া পথের অপর প্রান্তে আর-একজন পথিককে সাংঘাতিকরূপে আহত করিল। অবশেষে পলাতক ধরা পড়িলে জানা গেল তাহার কোনো অপরাধ ছিল না; সে কেবল ভয়ে দৌড় দিয়াছিল। বিচারে স্থির হইল পুলিসম্যান তাহারা কর্তব্য পালন করিয়াছিল। যে দেশের আইনে এইরূপ ব্যবস্থা, পুলিসের এইরূপ ব্যবহার, সে দেশের সাধারণ লোকেরাও যে অস্ত্র প্রয়োগ সম্বন্ধে