প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
চক্রবর্তী কহিলেন, “যে বিবাহের কথা বলিতেছ সেটা ঘটিতেই হইবে, এমন কী কথা আছে!”
শৈল। বল কী বাবা, নলিনাক্ষবাবুর মা যে আশীর্বাদ করিয়া আসিয়াছেন!
চক্রবর্তী। বিশ্বেশ্বরের আশীর্বাদে সে আশীর্বাদ ফাঁসিয়া গেছে। মা কমল, তোমার কোনো ভয় নাই, ধর্ম তোমার সহায় আছেন।
কমলা সব কথা স্পষ্ট না বুঝিয়া দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া খুড়ামশায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।
তিনি কহিলেন, “সে বিবাহের সম্বন্ধ ভাঙিয়া গেছে। এ বিবাহে নলিনাক্ষবাবুও রাজি নহেন এবং তাঁহার মা'র মাথায়ও সুবুদ্ধি আসিয়াছে।”
শৈলজা ভারি খুশি হইয়া কহিল, “বাঁচা গেল বাবা! কাল এই খবরটা শুনিয়া রাত্রে আমি ঘুমাইতে পারি নাই। কিন্তু সে যাই হোক, কমল কি নিজের ঘরে চিরদিন এমনি পরের মতো কাটাইবে? কবে সব পরিষ্কার হইয়া যাইবে?”
চক্রবর্তী। ব্যস্ত হোস কেন শৈল? যখন ঠিক সময় আসিবে তখন সমস্ত সহজ হইয়া যাইবে।
কমলা কহিল, “এখন যা হইয়াছে এই সহজ, এর চেয় সহজ আর-কিছু হইতে পারে না। আমি বেশ সুখে আছি, আমাকে এর চেয়ে সুখ দিতে গিয়া আবার আমার ভাগ্যকে ফিরাইয়া দিয়ো না খুড়ামশায়! আমি তোমাদের পায়ে ধরি, তোমরা কাহাকেও কিছু বলিয়ো না, আমাকে এই ঘরের একটা কোণে ফেলিয়া আমার কথা ভুলিয়া যাও। আমি খুব সুখে আছি।”
বলিতে বলিতে কমলার দুই চোখ দিয়া ঝর্ ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল।
চক্রবর্তী ব্যস্তসমস্ত হইয়া কহিলেন, “ও কী, মা, কাঁদ কেন? তুমি যাহা বলিতেছ আমি বেশ বুঝিতেছি। তোমার এই শান্তিতে আমরা কি হাত দিতে পারি? বিধাতা আপনি যা ধীরে ধীরে করিতেছেন, আমরা নির্বোধের মতো তার মধ্যে পড়িয়া কি সমস্ত ভণ্ডুল করিয়া দিব? কোনো ভয় নাই। আমার এত বয়স হইয়া গেল, আমি কি স্থির হইয়া থাকিতে জানি না?”
এমন সময় উমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া তাহার আকর্ণবিস্ফারিত হাস্য লইয়া দাঁড়াইল।
খুড়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী রে উম্শে, খবর কী?”
উমেশ কহিল, “রমেশবাবু নীচে দাঁড়াইয়া আছেন, ডাক্তারবাবুর কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন।”
কমলার মুখ পাংশুবর্ণ হইয়া গেল। খুড়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িলেন; কহিলেন “ভয় নাই মা, আমি সব ঠিক করিয়া দিতেছি।”
খুড়া নীচে আসিয়া একেবারে রমেশের হাত ধরিয়া কহিলেন, “আসুন রমেশবাবু, রাস্তায় বেড়াইতে বেড়াইতে আপনার সঙ্গে গোটা-দুয়েক কথা কহিব।”
রমেশ আশ্চর্য হইয়া কহিল, “খুড়ামশায়, আপনি এখানে কোথা হইতে?”
খুড়া কহিলেন, “আপনার জন্য আছি; দেখা হইল, বড়ো ভালোই হইল। আসুন, আর দেরি নয়, কাজের কথাটা শেষ করিয়া ফেলা যাক!”
বলিয়া রমেশকে রাস্তায় টানিয়া লইয়া কিছুদূর গিয়া কহিলেন, “রমেশবাবু, আপনি এ বাড়িতে কেন আসিয়াছেন?”
রমেশ কহিল, “নলিনাক্ষ ডাক্তারকে খুঁজিতে আসিয়াছিলাম। তাঁহাকে কমলার কথা আগাগোড়া সমস্ত খুলিয়া বলা উচিত স্থির করিয়াছি। আমার এক-একবার মনে হয়, হয়তো কমলা বাঁচিয়া আছে।”
খুড়া কহিলেন, “যদি কমলা বাঁচিয়াই থাকে এবং যদি নলিনাক্ষের সঙ্গে তার দেখা হয়, তবে আপনার মুখে নলিনাক্ষ সমস্ত ইতিহাস শুনিলে কি সুবিধা হইবে। তাঁহার বৃদ্ধা মা আছেন, তিনি এ-সব কথা জানিতে পারিলে কমলার পক্ষে কি ভালো হইবে?”