প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ধরুন, ছায়ানটের আলাপ হচ্ছে। ছায়ানটের আরোহী অবরোহী, তার বাদী সম্বাদী, তার বিশেষ ‘পকড়’ দেখিয়ে ছায়ানটের ঘটস্থাপনা হল। কিন্তু সেইখানে থামলেই কি ছায়ানটের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল–তার প্রকৃতি ফুটল? এ যে সেই ভক্তের কথা যিনি প্রতিমার মুণ্ডু পরাবার পূর্বেই বলেছিলেন, ‘আহা! মা যে হাসছেন!’ অন্য ভাষায় বলি–আমার আমিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য নেতিবিচারের দ্বারা পার্থক্য-অনুভূতির কি কোনো প্রয়োজনই নেই? যে-সব যোগীর পূর্ণ সমাধি হয় তাঁদের বেলা তাঁরা আছেন এই যথেষ্ট। সাহিত্য যেমন, আপনার লেখায়, পরেশবাবু ও মাস্টার মশাই তাঁরা সৎ, এর বেশি তাঁদের সম্বন্ধে জানবার প্রয়োজনই হয় না। এঁরা পূর্ণ, এঁরা রুদ্ধগতি, আত্মসমাহিত, আত্মস্থ, আমাদের নমস্য। এঁরা হলেন শেষের কবিতা কিন্তু অন্যের পক্ষে ‘বহুর্ভবামি’ অস্তিত্বের বিকাশেচ্ছা নয় কি? আমি হব–বহু হব–এইটাই আর্টিস্টের প্রাণের কথা। আমি আছি–যেমন যোগীর। বহু হওয়াই যখন আর্টিস্টের ধর্ম, যখন সে যে-বস্তুর অন্তর উদ্ঘাটিত (reveal) করতে চায়, তার প্রকৃতি বুঝতে কোনো subtance কি গুপ্তসত্তা বোঝে না, তখন revelation এর জন্যই mere statement করে নীরব থাকলে তার চলে না। অতিরিক্ত কর্তব্যের মধ্যে একটি হল–ক-বস্তু খ-বস্তুর নয় প্রমাণ করা। যেটুকু না হলে নয় তারই আভাস দিয়ে মুখবন্ধ করলে আর্টিস্টের বহু হবার প্রবৃত্তিকে বঞ্চিত করা হয়। সাধারণের বেলাতেও তাই–সাধারণ শ্রোতাও যখন শুনছে তখন সে আর্টিস্টের সঙ্গে সঙ্গে বহু হচ্ছে। বহুলতাকে নয়, বহু হবার প্রবৃত্তিকে খাতির না করলে আর্ট্কে ঘৃণা করা হয়। বহুলতার মূলে আছে ‘বহুর্ভবামি’র তাগিদ। বিশেষত আমাদের আলাপে। আমাদের আলাপ অবিরাম গতিশীল, তার প্রকৃতিই হল procession। অতএব, ঠিক তার revelation হয় না, হয় এবং হওয়া চাই revealing।
এখন ছায়ানটের আলাপ চলুক। প্রথমেই সা’রে, গ’ম’প’ প’রে’ গ’ম’রে’ সা’ নেওয়া হল, তার পর আরোহীতে সা’রে রে’গা গা’মা’ মা’পা’ নিয়ে ধৈবত আন্দোলিত ক’রে গলা ওপরের সুরে পৌঁছল, অবরোহীতে ঐ প্রকার শুদ্ধস্বরগুলি ব্যবহার করে পা’রে’ গা’মা’ পা’ এই মীড়টি নিয়ে রিখাবে গলা থামল–কোনো স্বরই বিবাদী হল না। তবুও কি ছায়ানট রাগিণী গাওয়া হল? আমার মতে এখনো হল না, হল কেবল ছায়ানটের blue print টুকু, ডিজাইনটুকু। শ্রমবিভাগের ফলে স্থপতিবিদ্যায় ডিজাইনের কদর বেড়েছে জানি, কিন্তু নীল রঙের কাগজে সাদা আঁচড় দেখে বসবাসের সুখভোগ কি স্বাভাবিক? আপনি বলবেন কল্পনার উদ্রেক করানোই আর্টিস্টের কর্তব্য। কিন্তু কল্পনাও নানা জাতের, ডিজাইনারও নানা রকমের। সেইজন্য নীচের ও ওপরের তলার, স্নানের ঘরের, মায় সিঁড়ির ও cross-section চাই, এলিভেশনের লোভ দেখিয়ে ছেড়ে দিলে চলবে না। তার ওপর চাই নির্মাণ, চাই