প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বিপিন। তোমার সন্ন্যাসীর যেরকম চেহারা গলা এবং আসবাবের প্রয়োজন আমার তো তার কিছুই নেই। তবে তল্পিদার হয়ে পিছনে যেতে রাজি আছি। কানে যদি সোনার কুণ্ডল, অন্তত চোখে যদি সোনার চশমাটা পরে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াও তা হলে একটা প্রহরীর দরকার– সে কাজটা আমার দ্বারা কতকটা চলতে পারবে।
শ্রীশ। আবার ঠাট্টা!
বিপিন। না ভাই, ঠাট্টা নয়। আমি সত্যিই বলছি, তোমার প্রস্তাবটাকে যদি সম্ভবপর করে তুলতে পার তা হলে খুব ভালোই হয়। তবে এরকম একটা সম্প্রদায়ে সকলেরই কাজ সমান হতে পারে না, যার যেমন স্বাভাবিক ক্ষমতা সেই অনুসারে যোগ দিতে পারে।
শ্রীশ। সে তো ঠিক কথা। কেবল একটি বিষয়ে আমাদের খুব দৃঢ় হতে হবে, স্ত্রীজাতির কোনো সংস্রব রাখব না।
বিপিন। মাল্যচন্দন অঙ্গদকুণ্ডল সবই রাখতে চাও, কেবল ঐ একটা বিষয়ে এত বেশি দৃঢ়তা কেন?
শ্রীশ। ঐগুলো রাখছি বলেই দৃঢ়তা। যেজন্যে চৈতন্য তাঁর অনুচরদের স্ত্রীলোকের সঙ্গ থেকে কঠিন শাসনে দূরে রেখেছিলেন। তাঁর ধর্ম– অনুরাগ এবং সৌন্দর্যের ধর্ম, সেজন্যেই তার পক্ষে প্রলোভনের ফাঁদ অনেক ছিল।
বিপিন। তা হলে ভয়টুকুও আছে!
শ্রীশ। আমার নিজের জন্যে লেশমাত্র নেই। আমি আমার মনকে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্যে ব্যাপ্ত করে রেখে দিই, কোনো একটা ফাঁদে আমাকে ধরে কার সাধ্য, কিন্তু তোমরা যে দিনরাত্রি ফুটবল টেনিস ক্রিকেট নিয়ে থাক– তোমরা একবার পড়লে ব্যাটবল গুলিডাণ্ডা সবসুদ্ধ ঘাড়মোড় ভেঙে পড়বে।
বিপিন। আচ্ছা ভাই, সময় উপস্থিত হলে দেখা যাবে।
শ্রীশ। ও কথা ভালো নয়। সময় উপস্থিত হবে না, সময় উপস্থিত হতে দেব না। সময় তো রথে চড়ে আসেন না, আমরা তাঁকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসি– কিন্তু তুমি যে সময়টার কথা বলছ তাকে বাহন অভাবে ফিরতেই হবে।
উভয়ে। এসো পূর্ণবাবু!
বিপিন তাহাকে কেদারাটা ছাড়িয়া দিয়া একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল। পূর্ণর সহিত শ্রীশ ও বিপিনের তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলিয়া তাহাকে দুজনেই একটু বিশেষ খাতির করিয়া চলিত।
পূর্ণ। তোমাদের এই বারান্দায় জ্যোৎস্নাটি তো মন্দ রচনা করনি– মাঝে মাঝে থামের ছায়া ফেলে ফেলে সাজিয়েছ ভালো।
শ্রীশ। ছাদের উপর জ্যোৎস্না রচনা করা প্রভৃতি কতকগুলি অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা জন্মাবার পূর্ব হতেই আমার আছে। কিন্তু দেখো পূর্ণবাবু, ঐ দেশলাই করা-টরা ওগুলো আমার ভালো আসে না।
পূর্ণ। (ফুলের মালার দিকে চাহিয়া) সন্ন্যাসধর্মেই কি তোমার অসামান্য দখল আছে না কি?
শ্রীশ। সেই কথাই তো হচ্ছিল। সন্ন্যাসধর্ম তুমি কাকে বল শুনি।
পূর্ণ। যে ধর্মে দর্জি ধোবা নাপিতের কোনো সহায়তা নিতে হয় না, তাঁতিকে একেবারেই অগ্রাহ্য করতে হয়, পিয়ার্স্ সোপের