প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
এ আহ্বান হেমনলিনীর কানেও পৌঁছিল না, সে যেন কোন্ প্রেতমূর্তির অনুসরণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্য দ্রুতবেগে চলিল।
রমেশ ক্ষণকালের জন্য একবার থমকিয়া দাঁড়াইল; অগ্রসর হইবে কী ফিরিয়া যাইবে ভাবিয়া পাইল না। যোগেন্দ্র কহিল, “রমেশ, এসো, বাবা এইখানে বাহিরেই বসিয়া আছেন।” বলিয়া রমেশের হাত ধরিয়া তাহাকে অন্নদাবাবুর কাছে আনিয়া উপস্থিত করিল।
অন্নদাবাবু দূর হইতেই রমেশকে দেখিয়া হতবুদ্ধি হইয়া গেছেন। তিনি মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে ভাবিলেন, এ আবার কী বিঘ্ন উপস্থিত হইল!
রমেশ অন্নদাবাবুকে নত হইয়া নমস্কার করিল। অন্নদাবাবু তাহাকে বসিবার চৌকি দেখাইয়া দিয়া যোগেন্দ্রকে কহিলেন, “যোগেন, তুমি ঠিক সময়েই আসিয়াছ। আমি তোমাকে টেলিগ্রাফ করিব মনে করিতেছিলাম।”
যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কেন?”
অন্নদাবাবু কহিলেন, “হেমের সঙ্গে নলিনাক্ষের বিবাহ স্থির হইয়া গেছে। কাল নলিনাক্ষের মা হেমকে আশীর্বাদ করিয়া দেখিয়া গেছেন।”
যোগেন্দ্র। বল কী বাবা, বিবাহ একেবারে পাকাপাকি স্থির হইয়া গেছে? আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করিতেও নাই?”
অন্নদাবাবু। যোগেন্দ্র, তুমি কখন কী বল তার কিছুই স্থির নাই। আমি যখন নলিনাক্ষকে জানিতামও না তখন তোমরাই তো এই বিবাহের জন্য উদ্যোগী ছিলে।
যোগেন্দ্র। তখন তো ছিলাম, কিন্তু তা যাই হোক, এখনো সময় যায় নাই। ঢের কথা বলিবার আছে। আগে সেইগুলো শোনো, তার পরে যা কর্তব্য হয় করিয়ো।
অন্নদাবাবু কহিলেন, “সময়মত একদিন শুনিব, কিন্তু আজ আমার তো অবকাশ নাই। এখনি আমাকে বাহির হইতে হইবে।”
যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাইবে।”
অন্নদাবাবু কহিলেন, “নলিনাক্ষের মা’র ওখানে আমার আর হেমের নিমন্ত্রণ আছে। যোগেন্দ্র, তোমার তা হইলে এখানেই আহারের— ”
যোগেন্দ্র কহিল, “না না। আমার জন্যে ব্যস্ত হবার দরকার নেই। আমি রমেশকে সঙ্গে লইয়া এখানকার কোনো হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করিয়া লইব। সন্ধ্যার মধ্যে তোমরা ফিরিবে তো? তখনিও আমরা আসিব।”
অন্নদাবাবু কোনোমতেই রমেশের প্রতি কোনোপ্রকার শিষ্টসম্ভাষণ করিতে পারিলেন না। তাহার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করাও তাঁহার পক্ষে দুঃসাধ্য হইয়া উঠিল। রমেশও এতক্ষণ নীরবে থাকিয়া, যাইবার সময় অন্নদাবাবুকে নমস্কার করিয়া চলিয়া গেল।
ক্ষেমংকরী কমলাকে গিয়া কহিলেন, “মা, কাল হেমকে আর তার বাপকে দুপুর-বেলায় এখানে আহার করিতে নিমন্ত্রণ করা গেছে। কী রকম আয়োজনটা করা যায় বলো দেখি। বেয়াইকে এমন করিয়া খাওয়ানো দরকার যে, তিনি যেন নিশ্চিন্ত হইতে পারেন যে এখানে তাঁহার মেয়েটির খাওয়ার কষ্ট হইবে না। কী বল মা? তা, তোমার যেরকম রান্নার হাত, অপযশ হইবে না তা জানি। আমার ছেলে আজ পর্যন্ত কোনো রান্না খাইয়া কোনোদিন ভালোমন্দ কিছুই বলে নাই, কাল তোমার রান্নার প্রশংসা তাহার মুখে ধরে