প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অধিকরণের বাহনরূপে ‘এমনি’ শব্দের ব্যবহার আছে : এমনিতেই জায়গা পাই নে। খোঁচা দেবার ভঙ্গীতেও এই শব্দটার যোগ্যতা আছে : এমনিই কী যোগ্যতা।
‘যত’ শব্দ তার জুড়ি হারালে টিটকারির কাজে লাগে সে কথা পূর্বেই বলেছি। ‘অত’ কথাটারও তীক্ষ্মতা আছে, যেমন : অত চালাকি কেন, অত বাবুগিরি তোমাকে মানায় না, অত ভালোমানুষি করতে হবে না।
এজাতীয় আরও দৃষ্টান্ত আছে, যথা : ‘যে’ এবং ‘যেমন’। ‘সে’ এবং ‘তেমন’এর সঙ্গে যদি বিচ্ছেদ ঘটানো যায় তবে মুখ বাঁকানোর ভঙ্গী আনে, যথা : যে মধুর বাক্য তোমার। ‘তেমন’এর সঙ্গ-বর্জিত ‘যেমন’ শব্দটাও বদমেজাজি : যেমন তোমার বুদ্ধি।
এই ধরনেরই আর-একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ে : কোথাকার মানুষ হে। এ বাক্যটার চেহারা প্রশ্নেরই মতো, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা রাখে না। এতে যে সংবাদ ঊহ্য আছে সে নিবাসঘটিত নয়, সে হচ্ছে লোকটার ধৃষ্টতার বা মূর্খতার পরিচয় নিয়ে। কোথাকার সাধুপুরুষ এসে জুটল : লোকটার সাধুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে না।
‘যেমতি’ ‘তেমতি’ পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। ‘সেইমতো’ ‘এইমতো’ এখনো টিঁকে আছে। কিন্তু ‘এর মতো’ ‘তার মতো’র ব্যবহারটাই বেশি। করণকারকে রয়ে গেছে ‘কোনোমতে’। অথচ ‘কোনোমতো’ বা ‘কোন্মতো’ শব্দটা নেই।
‘কেন’ শব্দটা সর্বনাম। এর অর্থ প্রশ্নবাচক, এর রূপটা করণকারকের। ঘটনা ঘটল কেন : অর্থাৎ ঘটল কী কারণের দ্বারা। ‘কেনে বা’ প্রাচীন কাব্যেও পড়েছি, গ্রাম্য লোকের মুখেও শোনা যায়।
কেন, কেন বা, কেনই বা। ‘লোকটা কেন কাঁদছে’ এ একটা সাধারণ প্রশ্ন। ‘কেন বা কাঁদছে’ বললে কান্নাটা যে ব্যর্থ বা অবোধ্য সেইটে বলা হল। কেন বা এলে বিদেশে : অর্থাৎ বিদেশে আসাটা নিষ্ফল। কেনই বা মরতে এখানে এলুম : এ হল পরিতাপের ধিক্কার। এর মধ্যে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, এই প্রয়োগগুলির সবগুলোই অপ্রিয়তাব্যঞ্জক। কেন তিনি তিব্বতি পড়ছেন তা নিজেই জানেন না। : এ সহজ কথা। যেই বলা হল ‘কেনই বা তিনি তিব্বতি পড়তে বসলেন’ অমনি বোঝা যায়, কাজটা সুবুদ্ধির মতো হয় না।
‘কেন’ শব্দের এক বর্গের শব্দ ‘যেন’ ‘হেন’। ‘যেন’ সাদৃশ্য বোঝাতে। ‘হেন’ শব্দের প্রয়োগ বিশেষণে, যথা : হেন রূপ দেখি নাই কভু, হেন কাজ নেই যা সে করতে পারে না, সে-হেন লোকও তেড়ে এল। হেন কাজ = এমন কাজ। সে-হেন = তার মতো।
‘যেন’ শব্দটাতে বিদ্রূপের ভঙ্গী লাগানো চলে : যেন নবাব খাঞ্জে খাঁ, যেন আহ্লাদে পুতুল, যেন কাত্তিকটি, যেন ডানাকাটা পরী। বাংলায় বিদ্রূপের ভঙ্গীরীতি অত্যন্ত সুলভ।
‘তেন’ শব্দের ব্যবহার লোপ পেয়েছে। ‘হেন’ শব্দের অর্থ ‘মতো’ কিংবা ‘এই-মতো’। এর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় ‘তেন’ শব্দের অর্থ ‘সেইমতো’। ‘হেন-তেন’ জোড়া শব্দ এখনো চলিত আছে। হেন-তেন কত কী বকে গেল : অর্থাৎ, ব’কল কখনো এরকম কখনো সেরকম, অসংলগ্ন বকুনি। প্রাচীন বাংলায় দেখেছি ‘যেন কন্যা তেন বর’। এখানে ‘যেন’ শব্দের ‘যে-হেন’ অর্থ।
‘যেন’ শব্দটা ‘হেন’ শব্দের জুড়ি। পদাবলীতে পাওয়া গেছে, ‘যেহ্ন’ (যে-হেন)। বোঝা যায় এই ‘হেন’ শব্দের যোগেই ‘যেন’ শব্দ চেহারা পেয়েছে। আধুনিক বাংলায় ‘যেন’ শব্দটা তুলনা-উপমার কাজেই লাগে, কিন্তু পুরাতন বাংলায় তার অর্থের