প্রতিশব্দ

Nation—অধিজাতি। National—আধিজাতিক। Nationalism—আধিজাত্য।

Race—প্রবংশ। Race preservation—প্রবংশ রক্ষা।

Tribe—জাতি সম্প্রদায়। Caste—জাতি, বর্ণ। Genus এবং speciesকে যথাক্রমে মহাজাতি ও উপজাতি নাম দেওয়া যাইতে পারে।

প্রতিশব্দ সম্বন্ধে আষাঢ়ের শান্তিনিকেতনে যে প্রবন্ধ বাহির হইয়াছিল সে সম্বন্ধে পাঠকদের কাছ হইতে আলোচনা আশা করিয়াছিলাম। কিন্তু এখনো কাহারো কাছ হইতে কোনো সাড়া মেলে নাই। কিন্তু এ-সব কাজ একতরফা হইলে কাঁচা থাকিয়া যায়। যে-সকল শব্দকে ভাষায় তুলিয়া লইতে হইবে তাহাদের সম্বন্ধে বিচার ও সম্মতির প্রয়োজন।

আমি নিজেই বলিয়াছি নেশন কথাটাকে তর্জমা না করিয়া ব্যবহার করাই ভালো। ওটা নিতান্তই ইংরেজি, অর্থাৎ ঐ শব্দের দ্বারা যে অর্থ প্রকাশ করা হয়, সে অর্থ ইহার আগে আমরা ব্যবহার করি নাই। এমন-কি, ইংরেজিতেও নেশনের সংজ্ঞা নির্ণয় করা শক্ত।

সেইজন্যই বাংলায় প্রচলিত কোনো শব্দ নেশনের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহার করিলে কিছুতেই খাপ খাইবে না। “জাতি” কথাটা ঐ অর্থে আজকাল আমরা ব্যবহার করি বটে কিন্তু তাহাতে ভাষার ঢিলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হইতেছে। বরঞ্চ সাহিত্য ইতিহাস সংগীত বিদ্যালয় প্রভৃতি শব্দ-সহযোগে যখন আমরা ‘জাতীয়’ বিশেষণ প্রয়োগ করিয়া থাকি তখন তাহাতে কাজ চলিয়া যায়—কারণ ঐ বিশেষণের অন্য কোনো কাজ নাই। সেইজন্যই ‘জাতীয়’ বিশেষণ শব্দটি ন্যাশনল শব্দের প্রতিশব্দরূপে এমনি শিকড় গাড়িয়া বসিয়াছে যে, উহাকে আর উৎপাটিত করিবার জো নাই। কিন্তু কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রন্থে যদি nation, race, tribe, clan শব্দের বিশেষত্ব নির্দেশ করার প্রয়োজন ঘটে তবে বিপদে পড়িতে হইবে। সুতরাং নেশন ও ন্যাশনাল কথাটা বাংলায় জাতে তুলিয়া লওয়া কর্তব্য মনে করি। এমন বিস্তর বিদেশী কথা বাংলায় চলিয়া গেছে।

এই ‘জাতি’ শব্দের প্রসঙ্গে আর-একটি শব্দ মনে পড়িতেছে যাহার একটা কিনারা করা আশু আবশ্যক। কোনো বিশেষকালে-জাত সমস্ত প্রজাকে ইংরেজিতে generation বলে। বর্তমান অতীত বা ভাবী জেনেরেশন সম্বন্ধে যখন বাংলায় আলোচনার দরকার হয় তখন আমরা পাশ কাটাইয়া যাই। কিন্তু বিঘ্ন দূর না করিয়া বিঘ্ন এড়াইয়া চলিলে ভাষার দুর্বলতা ঘোচে না।

বস্তুত বাংলায় ‘প্রজা’ কথার অন্য অর্থ যদি চলিত না থাকিত তবে ঐ কথাটি ঠিক কাজে লাগিত। বর্তমানে যাহারা জাত তাহাদিগকে বর্তমানকালের প্রজা, অতীতকালে যাহারা জাত তাহাদিগকে অতীত কালের প্রজা বলিলে কোনো গোল হইত না। কিন্তু এখন আর উপায় নাই। ‘জন’ কথাটারও ঐ রকমেরই অর্থ। জন্ম শব্দের সঙ্গেই উহার যোগ। কিন্তু উহার প্রচলিত অর্থটি প্রবল, অন্য কোনো অর্থে উহাকে খাটানো চলিবে না।

অতএব প্রজা এবং জন এই কথার মাঝামাঝি একটা কথা যদি পাওয়া যায় তাহা হইলে সেটা ব্যবহারে লাগানো যায়। যথা, প্রজন। মনুতে স্ত্রীলোকের বর্ণনাস্থলে আছে ‘প্রজনার্থং মহাভাগাঃ পূজার্হা গৃহদীপ্তয়ঃ।’ অর্থাৎ প্রজনের জন্য স্ত্রীজাতি পূজনীয়া। ইংরেজি ভাষায় generation শব্দের অন্য যে-অর্থ আছে অর্থাৎ জন্মদান করা, এই প্রজনের সেই অর্থ। কিন্তু পূর্বকথিত অর্থে এই শব্দকে ব্যবহার করিলে কানে খারাপ লাগিবে না। প্রজন শব্দটা প্রথমে বুঝিতে হয়তো গোল ঠেকিবে, উহার বদলে যদি ‘প্রজাত’ শব্দ ব্যবহার করা হয় তাহা হইলে অপেক্ষাকৃত সহজে বুঝা যাইবে। এ সম্বন্ধে পাঠকদের মত জানিতে চাই।