আধুনিক কাব্য

আমার খালি মাথার ‘পরে।

একটি বধূর কথা—

আমার ছাঁটা চুল ছিল খাটো, তাতে কপাল ঢাকত না।

আমি দরজার সামনে খেলা করছিলুম, তুলছিলুম ফুল।

তুমি এলে আমার প্রিয়, বাঁশের খেলা-ঘোড়ায় চ’ড়ে,

কাঁচা কুল ছড়াতে ছড়াতে।

চাঁঙ্‌কানের গলিতে আমরা থাকতুম কাছে কাছে।

আমাদের বয়স ছিল অল্প, মন ছিল আনন্দে ভরা।

তোমার সঙ্গে বিয়ে হল যখন আমি পড়লুম চোদ্দয়।

এত লজ্জা ছিল যে হাসতে সাহস হত না,

অন্ধকার কোণে থাকতুম মাথা হেঁট ক’রে,

তুমি হাজার বার ডাকলেও মুখ ফেরাতুম না।

পনেরো বছরে পড়তে আমার ভুর্‌কুটি গেল ঘুচে,

আমি হাসলুম। ...

আমি যখন ষোলো তুমি গেলে দূর প্রবাসে—

চ্যুটাঙের গিরিপথে, ঘূর্ণিজল আর পাথরের ঢিবির ভিতর দিয়ে।

পঞ্চম মাস এল, আমার আর সহ্য হয় না।

আমাদের দরজার সামনে রাস্তা দিয়ে তোমাকে যেতে দেখছিলুম,

সেখানে তোমার পায়ের চিহ্ন সবুজ শ্যাওলায় চাপা পড়ল—

সে শ্যাওলা এত ঘন যে ঝাঁট দিয়ে সাফ করা যায় না।

অবশেষে শরতের প্রথম হাওয়ায় তার উপরে জমে উঠল ঝরা পাতা।

এখন অষ্টম মাস, হলদে প্রজাপতিগুলো

আমাদের পশ্চিম-বাগানের ঘাসের উপর ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।

আমার বুক যে ফেটে যাচ্ছে, ভয় হয় পাছে আমার রূপ যায় ম্লান হয়ে।

ওগো, যখন তিনটে জেলা পার হয়ে তুমি ফিরবে

আগে থাকতে আমাকে খবর পাঠাতে ভুলো না।

চাঙফেঙ্‌শার দীর্ঘ পথ বেয়ে আমি আসব, তোমার সঙ্গে দেখা হবে।

দূর ব’লে একটুও ভয় করব না।

এই কবিতায় সেন্টিমেন্টের সুর একটুও চড়ানো হয় নি, তেমনি তার ‘পরে বিদ্রূপ বা অবিশ্বাসের কটাক্ষপাত দেখছি নে। বিষয়টা অত্যন্ত প্রচলিত, তবু এতে রসের অভাব নেই। স্টাইল বেঁকিয়ে দিয়ে একে ব্যঙ্গ করলে জিনিসটা আধুনিক হত। কেননা, সবাই যাকে অনায়াসে মেনে নেয় আধুনিকেরা কাব্যে তাকে মানতে অবজ্ঞা করে। খুব সম্ভব, আধুনিক কবি ঐ কবিতার উপসংহারে লিখত, স্বামী চোখের জল মুছে পিছন ফিরে তাকাতে তাকাতে চলে গেল, আর মেয়েটি তখনি লাগল শুকনো চিংড়িমাছের বড়া