প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্য সভ্যতা

স্বার্থের প্রকৃতিই বিরোধ। য়ুরোপীয় সভ্যতার সীমায় সীমায় সেই বিরোধ উত্তরোত্তর কণ্টকিত হইয়া উঠিতেছে। পৃথিবী লইয়া ঠেলাঠেলি কাড়াকাড়ি পড়িবে, তাহার পূর্বসূচনা দেখা যাইতেছে।

ইহাও দেখিতেছি, য়ুরোপের এই রাষ্ট্রীয় স্বার্থপরতা ধর্মকে প্রকাশ্যভাবে অবজ্ঞা করিতে আরম্ভ করিয়াছে।’জোর যার মুলুক তার’এ নীতি স্বীকার করিতে আর লজ্জা বোধ করিতেছে না।

ইহাও স্পষ্ট দেখিতেছি, যে ধর্মনীতি ব্যক্তিবিশেষের নিকট বরণীয় তাহা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে আবশ্যকের অনুরোধে বর্জনীয় এ কথা একপ্রকার সর্বজনগ্রাহ্য হইয়া উঠিতেছে। রাষ্ট্রতন্ত্রে মিথ্যাচরণ সত্যভঙ্গ প্রবঞ্চনা এখন আর লজ্জাজনক বলিয়া গণ্য হয় না। যে-সকল জাতি মনুষ্যে মনুষ্যে ব্যবহারে সত্যের মর্যাদা রাখে, ন্যায়াচরণকে শ্রেয়োজ্ঞান করে, রাষ্ট্রতন্ত্রে তাহাদেরও ধর্মবোধ অসাড় হইয়া থাকে। সেইজন্য ফরাসি, ইংরাজ, জর্মান, রুশ, ইহারা পরস্পরকে কপট ভণ্ড প্রবঞ্চক বলিয়া উচ্চস্বরে গালি দিতেছে।

ইহা হইতে এই প্রমাণ হয় যে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে য়ুরোপীয় সভ্যতা এতই আত্যন্তিক প্রাধান্য দিতেছে যে, সে ক্রমশই স্পর্ধিত হইয়া ধ্রুবধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করিতে উদ্যত হইয়াছে। এখন গত শতাব্দীর সাম্য-সৌভ্রাত্রের মন্ত্র য়ুরোপের পরিহাসবাক্য হইয়া উঠিয়াছে। এখন খ্রীস্টান মিশনারিদের মুখেও ‘ভাই’ কথার মধ্যে ভ্রাতৃভাবের সুর লাগে না।

জগদ্‌বিখ্যাত পরিহাসরসিক মার্ক্‌ টোয়েন গত ফেব্রুয়ারি মাসের ‘নর্থ আমেরিকান রিভিয়ু’ পত্রে ‘তিমিরবাসী ব্যক্তিটির প্রতি’ (To The person sitting in Darkness)-নামক যে প্রবন্ধ লিখিয়াছেন তাহা পাঠ করিলে আধুনিক সভ্যতার ব্যাধিলক্ষণ কিছু কিছু চোখে পড়িবে। তীব্র পরিহাসের দ্বারা প্রখরশাণিত সেই প্রবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করা অসম্ভব। লেখাটি সভ্যমণ্ডলীর রুচিকর হয় নাই; কিন্তু শ্রদ্ধেয় লেখক স্বার্থপর সভ্যতার বর্বরতার যে-সকল উদাহরণ উদ্‌ধৃত করিয়া দিয়াছেন তাহা প্রামাণিক। দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার এবং হানাহানি-কাড়াকাড়ির যে চিত্র তিনি উদ্‌ঘাটন করিয়াছেন তাহার বিভীষিকা তাঁহার উজ্জ্বল পরিহাসের আলোকে ভীষণরূপে পরিস্ফুট হইয়াছে।

রাষ্ট্রীয় স্বার্থপরতা যে য়ুরোপের সাহিত্য ও ধর্মকে ক্রমশ অধিকার করিতেছে তাহা কাহারো অগোচর নাই। কিপলিং এক্ষণে ইংরাজি সাহিত্যের শীর্ষস্থানে, এবং চেম্বর্লেন ইংরাজ রাষ্ট্রব্যাপারের একজন প্রধান কাণ্ডারী। ধূমকেতুর ছোটো মুণ্ডটির পশ্চাতে তাহার ভীষণ ঝাঁটার মতো পুচ্ছটি দিগন্ত ঝাঁটাইয়া আসে–তেমনি মিশনরির করধৃত খ্রীস্টান ধর্মালোকের পশ্চাতে কী দারুণ উৎপাত জগৎকে সন্ত্রস্ত করে তাহা এক্ষণে জগদ্‌বিখ্যাত হইয়া গেছে। এ সম্বন্ধে মার্ক্‌ টোয়েনের মন্তব্য পাদটীকায় উদ্‌ধৃত হইল।*

* The following is from the New York Tribune of Christmas Eve. It comes from that Journal's Tokio Correspondent. It has a strange and impudent sound, but the Japanese are but partially civilized as yet. When they become wholly civilized they will not talk so :

‘The missionary question, of course, occupies a foremost place in the discussion. It is now felt as essential that the Western Powers take cognizance of the sentiment here that religious invasions of Oriental countries by powerful Western organizations are tantamount to filibustering expeditions, and should not only be discountenanced but that stern measures should be adopted for their suppression. The feeling here is that the missionary organizations constitute a constant menace to peaceful international relations.’Shall We? That is, shall we go on conferring our Civilization upon the People that Sit in Darkness, or shall we give those poor things a rest? Shall we bang right ahead in our old- time loud, pious way and commit the new century to the game; or