গ্রাম্যসাহিত্য
এই পুরস্কারের কড়ার করাইয়া লইয়া দূতী বাহির হইলেন। যমুনা পার হইয়া পথের মধ্যে–
হাস্যরসে একজনকে জিজ্ঞাসিলেন তবে।
কও দেখি কার অধিকারে বসত কর সবে॥
সে লোক বললে তখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্ররায়।
মেঘের ধারা রৌদ্রে যেমন লাগল দূতীর গায়॥
ননিচোরা রাখাল ছোঁড়া ঠাট করেছে আসি।
চোর বিনে তাকে কবে ডাকছে গোকুলবাসী॥
কৃষ্ণের এই রায়বাহাদুর খেতাবটি দূতীর কাছে অত্যন্ত কৌতুকাবহ বোধ হইল। কৃষ্ণচন্দ্ররায়! এ তো আসল নাম নয়। এ কেবল মূঢ় লোকদিগকে ভুলাইবার একটা আড়ম্বর। আসল নাম বৃন্দা জানে।
চললেন শেষে কাঙাল বেশে উতরিলেন দ্বারে।
হুকুম বিনে রাত্রিদিনে কেউ না যেতে পারে॥
বহুকষ্টে হুকুম আনাইয়া ‘বৃন্দাদূতী গেল সভার মাঝে’।
সম্ভাষণ করি দূতী থাকল কতক্ষণ।
একদৃষ্টে চেয়ে দেখে কৃষ্ণের বদন॥
ধড়াচূড়া ত্যাগ করিয়ে মুকুট দিয়েছ মাথে।
সব অঙ্গে রাজ-আভরণ, বংশী নাইকো হাতে॥
সোনার মালা কণ্ঠহার বাহুতে বাজুবন্ধ।
শ্বেত চামরে বাতাস পড়ে দেখে লাগে ধন্দ॥
নিশান উড়ে, ডঙ্কা মারে, বলছে খবরদার।
ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের ঘটা ব্যবস্থা বিচার॥
আর এক দরখাস্ত করি শুন দামোদর।
যমুনাতে দেখে এলেম এক তরী মনোহর॥
শূন্য হয়ে ভাসছে তরী ওই যমুনাতীরে।
কাণ্ডারী-অভাবে নৌকা ঘাটে ঘাটে ফিরে॥
পূর্বে এক কাণ্ডারী ছিল সর্বলোকে কয়।
সে চোর পালালো কোথা তাকে ধরতে হয়॥
শুনতে পেলেম হেথা এলেম মথুরাতে আছে।
হাজির না হয় যদি জানতে পাবে পাছে।
মেয়ে হয়ে কয় কথা, পুরুষের ডরায় গা।
সভাশুদ্ধ নিঃশব্দ, কেউ না করে রা–।
ব্রজপুরে ঘর-বসতি মোর।
ভাণ্ড ভেঙে ননি খেয়ে পলায়েছে চোর॥