আত্মপরিচয় ৩

যদি     কাজে থাকি আমি গৃহমাঝ

     ওগো মরণ, হে মোর মরণ,

তুমি     ভেঙে দিয়ো মোর সব কাজ

     কোরো সব লাজ অপহরণ।

যদি     স্বপনে মিটায়ে সব সাধ

     আমি শুয়ে থাকি সুখশয়নে,

যদি     হৃদয়ে জড়ায়ে অবসাদ

     থাকি আধজাগরূক নয়নে —

তবে    শঙ্খে তোমার তুলো নাদ

     করি প্রলয়শ্বাস ভরণ,

আমি     ছুটিয়া আসিব ওগো নাথ,

     ওগো মরণ, হে মোর মরণ।

খেয়া ' তে আগমন বলে যে কবিতা আছে, সে কবিতায় যে মহারাজ এলেন তিনি কে? তিনি যে অশান্তি। সবাই রাত্রে দুয়ার বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল, কেউ মনে করে নি তিনি আসবেন। যদিও থেকে থেকে দ্বারে আঘাত লেগেছিল, যদিও মেঘগর্জনের মতো ক্ষণে ক্ষণে তাঁর রথচক্রের ঘর্ঘরধ্বনি স্বপ্নের মধ্যেও শোনা গিয়েছিল তবু কেউ বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না যে, তিনি আসছেন, পাছে তাদের আরামের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু দ্বার ভেঙে গেল — এলেন রাজা।

ওরে দুয়ার খুলে দে রে,

বাজা শঙ্খ বাজা।

গভীর রাতে এসেছে আজ

আঁধার ঘরের রাজা।

বজ্র ডাকে শূন্যতলে,

বিদ্যুতেরই ঝিলিক ঝলে,

ছিন্নশয়ন টেনে এনে

আঙিনা তোর সাজা,

ঝড়ের সাথে হঠাৎ এল

দুঃখরাতের রাজা।

ওই খেয়া ' তে দান বলে একটি কবিতা আছে। তার বিষয়টি এই যে, ফুলের মালা চেয়েছিলুম, কিন্তু কী পেলুম।

এ তো মালা নয় গো, এ যে

তোমার তরবারি।

জ্বলে ওঠে আগুন যেন,

বজ্র-হেন ভারী —

এ যে তোমার তরবারি।