আত্মপরিচয় ১
নিঃশেষে বিকীর্ণ করিয়া দিয়াছি ; তখন মাটিকে আর মাটি বলিয়া দূরে রাখি নাই, তখন জলের ধারা আমার অন্তরের মধ্যে আনন্দগানে বহিয়া গেছে। তখনি এ কথা বলিতে পারিয়াছি —

হই যদি মাটি, হই যদি জল,

হই যদি তৃণ, হই ফুলফল,

জীবসাথে যদি ফিরি ধরাতল

কিছুতেই নাই ভাবনা,

যেথা যাব সেথা অসীম বাঁধনে

অন্তবিহীন আপনা।

তখনি এ কথা বলিয়াছি —

আমারে ফিরায়ে লহো, অয়ি বসুন্ধরে,

কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে

বিপুল অঞ্চলতলে। ওগো মা মৃণ্ময়ি,

তোমার মৃত্তিকা-মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই,

দিগ্বিদিকে আপনাকে দিই বিস্তারিয়া

বসন্তের আনন্দের মতো।

এ কথা বলিতে কুণ্ঠিত হই নাই —

তোমার মৃত্তিকা-সনে

আমারে মিশায়ে লয়ে অনন্ত গগনে

অশ্রান্তচরণে করিয়াছ প্রদক্ষিণ

সবিতৃমণ্ডল, অসংখ্য রজনীদিন

যুগযুগান্তর ধরি ; আমার মাঝারে

উঠিয়াছ তৃণ তব, পুষ্প ভারে ভারে

ফুটিয়াছে, বর্ষণ করেছে তরুরাজি

পত্র ফুল ফল গন্ধরেণু।

আমার স্বাতন্ত্র্যগর্ব নাই — বিশ্বের সহিত আমি আমার কোনো বিচ্ছেদ স্বীকার করি না।

 

মানব-আত্মার দম্ভ আর নাহি মোর

চেয়ে তোর স্নিগ্ধশ্যাম মাতৃমুখ-পানে ;

ভালোবাসিয়াছি আমি ধূলিমাটি তোর।

আশা করি, পাঠকেরা ইহা হইতে এ কথা বুঝিবেন, আমি আত্মাকে বিশ্বপ্রকৃতিকে বিশ্বেশ্বরকে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র কোঠায় খণ্ড খণ্ড করিয়া রাখিয়া আমার ভক্তিকে বিভক্ত করি নাই।

আমি, কি আত্মার মধ্যে কি বিশ্বের মধ্যে, বিস্ময়ের অন্ত দেখি না। আমি জড় নাম দিয়া, সসীম নাম দিয়া, কোনো