প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কিন্তু পূর্বোদ্ধৃত বনবাস, জনরব বলবান প্রভৃতি শব্দে এ নিয়ম খাটে নাই। তাহাতে অকার ও আকারের পূর্ববর্তী অ লোপ পায় নাই।
অথচ, পর্কনলা আল্পনা অব্সর (লিখিত ভাষায় নহে) প্রভৃতি প্রচলিত কথায় বীম্কসের নিয়ম খাটে। ইহা হইতে বুঝা যায়, যে-সকল সংস্কৃত শব্দ ভাষায় নূতন প্রবেশ করিয়াছে এবং জনসাধারণের দ্বারা সর্বদা ব্যবহৃত হয় না, তাহাতে সংস্কৃত উচ্চারণের নিয়ম এখনো রক্ষিত হয়। কিন্তু ‘পাঠ্শালা’ প্রভৃতি সংস্কৃত কথা যাহা চাষাভূষারাও নিয়ত ব্যবহার করে, তাহাতে বাংলাভাষার নিয়ম সংস্কৃত নিয়মকে পরাস্ত করিয়াছে।
বীম্স্ লিখিয়াছেন, বিশেষণ শব্দে সিলেব্িলের অন্তবর্তী অকারের লোপ হয় না; যথা, ভাল ছোট বড়।
রামমোহন রায় ১৮৩৩ খ্রীস্টাব্দে যে গৌড়ীয় ব্যাকরণ রচনা করেন, তাহাতে তিনিও লেখেন:
গৌড়ীয় ভাষায় অকারান্ত বিশেষণ শব্দ অকারান্ত উচ্চারণ হয় যেমন ছোট খাট; এতদ্ভিন্ন তাবৎ অকারান্ত শব্দ হলন্ত উচ্চারিত হয়, যেমন ঘট্ পট্ রাম্ রাম্দাস্ উত্তম্ সুন্দর্ ইত্যাদি।
রামমোহন রায়ের উদ্ধৃত দৃষ্টান্ত তাঁহার নিয়মকে অপ্রমাণ করিতেছে তাহা তিনি লক্ষ্য করেন নাই। উত্তম ও সুন্দর শব্দ বিশেষণ শব্দ। যদি কেহ বলেন উহা সংস্কৃত শব্দ, তথাপি খাঁটি বাংলা শব্দেও ব্যতিক্রম মিলিবে; যথা, নরম গরম।
এ কথা স্বীকার করিতে হইবে, খাঁটি বাংলায় দুই অক্ষরের অধিকাংশ বিশেষণ শব্দ হলন্ত নহে।
প্রথমেই মনে হয়, বিশেষণ শব্দ বিশেষরূপে অকারন্ত উচ্চারিত হইবে, এ নিয়মের কোনো সার্থকতা নাই। অতএব, ছোট বড় ভাল প্রভৃতি বিশেষণ শব্দ যে সাধারণ বাংলা শব্দের ন্যায় হসন্ত হয় নাই, তাহার কারণটা ঐ শব্দগুলির মূল সংস্কৃত শব্দে পাওয়া যাইবে। ‘ভালো’ শব্দ ভদ্র শব্দজ, ‘বড়ো’ বৃদ্ধ হইতে উৎপন্ন, ‘ছোটো’ ক্ষুদ্র শব্দের অপভ্রংশ। মূল শব্দগুলির শেষবর্ণ যুক্ত–যুক্তবর্ণের অপভ্রংশে হসন্ত বর্ণ না হওয়ারই সম্ভাবনা।
কিন্তু এ নিয়ম খাটে না। নৃত্য-র অপভ্রংশ নাচ, পঙ্ক–পাঁক, অঙ্ক–আঁক, রঙ্গ–রাং, ভট্ট–ভাট, হস্ত-হাত, পঞ্চ–পাঁচ ইত্যাদি।
অতএব নিশ্চয়ই বিশেষণের কিছু বিশেষত্ব আছে। সে বিশেষত্ব আরো চোখে পড়ে যখন দেখা যায়, বাংলার অধিকাংশ দুই অক্ষরের বিশেষণ, যাহা সংস্কৃত মূল শব্দ অনুসারে অকারান্ত হওয়া উচিত ছিল, তাহা আকারান্ত হইয়াছে।
যথা : সহজ–সোজা, মহৎ–মোটা, রুগ্ন–রোগা, ভগ্ন–ভাঙা, শ্বেত–শাদা, অভিষিক্ত–ভিজা, খঞ্জ-খোঁড়া, কাণ–কাণা, লম্ব–লম্বা, সুগন্ধ–সোঁধা, বক্র–বাঁকা, তিক্ত–তিতা, মিষ্ট–মিঠা, নগ্ন–নাগা, তির্ষক্–টেড়া, কঠিন–কড়া।
দ্রষ্টব্য এই যে, ‘কর্ণ’ হইতে বিশেষ্য শব্দ কান হইয়াছে, অথচ কান শব্দ হইতে বিশেষণ শব্দ কানা হইল। বিশেষ্য শব্দ হইল ফাঁক, বিশেষণ হইল ফাঁকা; বাঁক শব্দ বিশেষ্য, বাঁকা শব্দ বিশেষণ।
সংস্কৃত ভাষায় ক্ত প্রত্যয়যোগে যে-সকল বিশেষণ পদ নিষ্পন্ন হয়, বাংলায় তাহা প্রায়ই আকারান্ত বিশেষণ পদে পরিণত হয়; ছিন্নবস্ত্র বাংলায়–ছেঁড়া বস্ত্র, ধূলিলিপ্ত শব্দ বাংলায়–ধুলোলেপা, কর্ণকর্তিত-কানকাটা ইত্যাদি।
বিশেষ্য শব্দ চন্দ্র হইতে চাঁদ, বন্ধ হইতে বাঁধ, কিন্তু বিশেষণ শব্দ মন্দ হইতে হইল–মাদা। এক শব্দকে বিশেষরূপে বিশেষণে পরিণত করিলে ‘একা’ হয়।
এইরূপ বাংলা দুই-অক্ষরের বিশেষণ অধিকাংশই আকারান্ত। যেগুলি অকারান্ত হিন্দিতে সেগুলিও আকারান্ত; যথা, ছোটা বড়া ভালা।
ইহার একটা কারণ আমরা এখানে আলোচনা করিতেছি। স্বর্গগত উমেশচন্দ্র বটব্যালের রচনা হইতে দীনেশবাবু তাঁহার