নৌকাডুবি
                গেছে। রাজকন্যা চন্দ্রাকেই তাহারা নিজেদের বধূ জ্ঞান করিয়া দ্রুতবেগে স্বদেশে যাত্রা
                করিল।
                        তাহারা দরিদ্র ক্ষত্রিয়; কলিঙ্গে সমুদ্রতীরে তাহাদের বাস। সেখানে রাজকন্যার
                সহিত অন্যপক্ষের বরের মিলন হইল। বরের নাম চেৎসিং।
                        চেৎসিংহের মা আসিয়া বরণ করিয়া বধূকে ঘরে তুলিয়া লইলেন। আত্মীয়স্বজন
                সকলে আসিয়া কহিল, ‘আহা, এমন রূপ তো দেখা যায় না।”
                        মুগ্ধ চেৎসিং নববধূকে ঘরের কল্যাণলক্ষ্মী বলিয়া মনে মনে পূজা করিতে লাগিল।
                রাজকন্যাও সতীধর্মের মর্যাদা বুঝিতেন; তিনি চেৎসিংকে আপন পতি বলিয়া জানিয়া তাহার
                নিকট মনে মনে আত্মজীবন উৎসর্গ করিয়া দিলেন।
                        নবপরিণয়ের লজ্জা ভাঙিতে কিছুদিন গেল। যখন লজ্জা ভাঙিল তখন কথায়
                        কথায় চেৎসিং জানিতে পারিল যে, যাহাকে সে বধূ বলিয়া ঘরে লইয়াছে, সে রাজকন্যা
                        চন্দ্রা।


২৬

কমলা রুদ্ধনিশ্বাসে একান্ত আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিল, “তার পরে?”

রমেশ কহিল, “এই পর্যন্তই জানি, তার পরে আর জানি না। তুমিই বলো দেখি, তার পরে কী।”

কমলা। না না, সে হইবে না, তার পরে কী আমাকে বলো।

রমেশ। সত্য বলিতেছি, যে গ্রন্থ হইতে এই গল্প পাইয়াছি তাহা এখনো সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয় নাই— শেষের অধ্যায়গুলি কবে বাহির হইবে কে জানে।

কমলা অত্যন্ত রাগ করিয়া কহিল, “যাও, তুমি ভারি দুষ্ট! তোমার ভারি অন্যায়।”

রমেশ। যিনি বই লিখিতেছেন তাঁর সঙ্গে রাগারাগি করো। তোমাকে আমি কেবল এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছি, চন্দ্রাকে লইয়া চেৎসিং কী করিবে?

কমলা তখন নদীর দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল; অনেকক্ষণ পরে কহিল, “আমি জানি না, সে কী করিবে— আমি তো ভাবিয়া উঠিতে পারি না।”

রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিল; কহিল, “চেৎসিং কি সকল কথা চন্দ্রাকে প্রকাশ করিয়া বলিবে?”

কমলা কহিল, “তুমি বেশ যা হোক, না বলিয়া বুঝি সমস্ত গোলমাল করিয়া রাখিবে? সে যে বড়ো বিশ্রী। সমস্ত স্পষ্ট হওয়া চাই তো।”

রমেশ যন্ত্রের মতো কহিল, “তা তো চাই।”

রমেশ কিছুক্ষণ পরে কহিল, “আচ্ছা কমল, যদি— ”

কমলা। যদি কী?

রমেশ। মনে করো, আমিই যদি সত্য চেৎসিং হই, আর তুমি যদি চন্দ্রা হও—