কাহিনী

তবু তারে প্রাণপণে বক্ষে চাপি ধরি,

তারি সাথে এক পাপে ঝাঁপ দিয়া পড়ি,

এক বিনাশের তলে তলাইয়া মরি

অকাতরে — অংশ লই তার দুর্গতির,

অর্ধ ফল ভোগ করি তার দুর্মতির,

সেই তো সান্ত্বনা মোর — এখন তো আর

বিচারের কাল নাই, নাই প্রতিকার,

নাই পথ — ঘটেছে যা ছিল ঘটিবার,

ফলিবে যা ফলিবার আছে।                       [ প্রস্থান

গান্ধারী।                        হে আমার

অশান্ত হৃদয়, স্থির হও। নতশিরে

প্রতীক্ষা করিয়া থাকো বিধির বিধিরে

ধৈর্য ধরি। যেদিন সুদীর্ঘ রাত্রি ' পরে

সদ্য জেগে উঠে কাল সংশোধন করে

আপনারে, সেদিন দারুণ দুঃখদিন।

দুঃসহ উত্তাপে যথা স্থির গতিহীন

ঘুমাইয়া পড়ে বায়ু — জাগে ঝঞ্ঝাঝড়ে

অকস্মাৎ, আপনার জড়ত্বের 'পরে

করে আক্রমণ, অন্ধ বৃশ্চিকের মতো

ভীমপুচ্ছে আত্মশিরে হানে অবিরত

দীপ্ত বজ্রশূল, সেইমত কাল যবে

জাগে, তারে সভয়ে অকাল কহে সবে।

লুটাও লুটাও শির — প্রণম, রমণী,

সেই মহাকালে ; তার রথচক্রধ্বনি

দূর রুদ্রলোক হতে বজ্রঘর্ঘরিত

ওই শুনা যায়। তোর আর্ত জর্জরিত

হৃদয় পাতিয়া রাখ্‌ তার পথতলে।

ছিন্ন সিক্ত হৃৎপিণ্ডের রক্তশতদলে

অঞ্জলি রচিয়া থাক্‌ জাগিয়া নীরবে

চাহিয়া নিমেষহীন। তার পরে যবে

গগনে উড়িবে ধূলি, কাঁপিবে ধরণী,

সহসা উঠিবে শূন্যে ক্রন্দনের ধ্বনি —