কাহিনী

হে মহিষী!

গান্ধারী।                     শতগুণ বেদনা কি, নাথ,

লাগিছে না মোরে? প্রভু, দণ্ডিতের সাথে

দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমানে আঘাতে

সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার। যার তরে প্রাণ

কোনো ব্যথা নাহি পায় তার দণ্ডদান

প্রবলের অত্যাচার। যে দণ্ডবেদনা

পুত্রেরে পার না দিতে সে কারে দিয়ো না ;

যে তোমার পুত্র নহে তারো পিতা আছে,

মহা-অপরাধী হবে তুমি তার কাছে

বিচারক। শুনিয়াছি বিশ্ববিধাতার

সবাই সন্তান মোরা — পুত্রের বিচার

নিয়ত করেন তিনি আপনার হাতে

নারায়ণ ; ব্যথা দেন, ব্যথা পান সাথে ;

নতুবা বিচারে তাঁর নাই অধিকার,

মূঢ় নারী লভিয়াছি অন্তরে আমার

এই শাস্ত্র। পাপী পুত্রে ক্ষমা কর যদি

নির্বিচারে, মহারাজ, তবে নিরবধি

যত দণ্ড দিলে তুমি যত দোষীজনে,

ধর্মাধিপ নামে, কর্তব্যের প্রবর্তনে,

ফিরিয়া লাগিবে আসি দণ্ডদাতা ভূপে —

ন্যায়ের বিচার তব নির্মমতারূপে

পাপ হয়ে তোমারে দাগিবে। ত্যাগ করো

পাপী দুর্যোধনে।

ধৃতরাষ্ট্র।                    প্রিয়ে, সংহর, সংহর

তব বাণী। ছিঁড়িতে পারি নে মোহডোর,

ধর্মকথা শুধু আসি হানে সুকঠোর

ব্যর্থ ব্যথা। পাপী পুত্র ত্যাজ্য বিধাতার,

তাই তারে ত্যজিতে না পারি — আমি তার

একমাত্র। উন্মত্ত-তরঙ্গ-মাঝখানে

যে পুত্র সঁপেছে অঙ্গ তারে কোন্‌ প্রাণে

ছাড়ি যাব? উদ্ধারের আশা ত্যাগ করি