গৃহপ্রবেশ
খুলে থাক্‌-না দাঁড়িয়ে। কী বল, মাসি।

মাসি। থাকবে বৈকি যতীন, তোর ভালোবাসায় ভরা হয়ে থাকবে।

যতীন। ভাই হিমি, তুই থাকবি আমার ঘরটিতে। একদিন হয়তো সময় হবে, ঘরে প্রবেশ করবে। সেদিন যে-লোকেই থাকি, আমি জানতে পারব। হিমি, হিমি!

হিমি। কী, দাদা।

যতীন। তোর উপর ভার রইল, বোন। মনে আছে, কোন্‌ গানটা গাবি?

হিমি। আছে— অগ্নিশিখা, এসো এসো।

যতীন। লক্ষ্মী বোন আমার, কারো উপর রাগ করিস নে। সবাইকে ক্ষমা করিস। আর আমাকে যখন মনে করবি তখন মনে করিস, ‘আমাকে দাদা চিরদিন ভালোবাসত, আজও ভালোবাসে’। জান মাসি, আমার এই

বাড়িতেই হিমির বিয়ে হবে? আমাদের সেই পুরোনো দালানে, যেখানে আমার মায়ের বিয়ে হয়েছিল। সে দালানে আমি একটুও হাত দিই নি।

মাসি। তাই হবে, বাবা।

যতীন। মাসি, আর-জন্মে তুমি আমার মেয়ে হয়ে জন্মাবে, তোমাকে বুকে করে মানুষ করব।

মাসি। বলিস কী, যতীন। আবার মেয়ে হয়ে জন্মাব? নাহয় তোরই কোলে ছেলে হয়েই জন্ম হবে। সেই কামনাই কর‌্‌-না।

যতীন। না, ছেলে না— ছিঃ! ছোটোবেলায় যেমন ছিলে তেমনি অপরূপ সুন্দরী হয়ে তুমি আমার ঘরে আসবে। আমি তোমাকে সাজাব।

মাসি। আর বকিস নে, একটু ঘুমো।

যতীন। তোমার নাম দেব লক্ষ্মীরানী—

মাসি। ও তো একেলে নাম হল না।

যতীন। না, একেলে না। তুমি চিরদিন আমার সাবেককেলে। সেই তোমার সুধায়-ভরা সাবেককাল নিয়েই তুমি আমার ঘরে এসো।

মাসি। তোর ঘরে কন্যাদায়ের দুঃখ নিয়ে আসব, এ কামনা আমি তো করি-নে।

যতীন। তুমি আমাকে দুর্বল মনে কর, মাসি? দুঃখ থেকে বাঁচাতে চাও?

মাসি। বাছা, আমার যে মেয়েমানুষের মন, আমিই দুর্বল। তাই তোকে বড়ো ভয়ে ভয়ে সকল দুঃখ থেকে চিরদিন বাঁচাতে চেয়েছি। কিন্তু আমার সাধ্য কী আছে। কিছুই করতে পারি নি।

যতীন। মাসি, একটা কথা গর্ব করে বলতে পারি। যা পাই নি তা নিয়ে কোনোদিন কাড়াকাড়ি করি নি। সমস্ত জীবন হাতজোড় করে অপেক্ষাই করলুম। মিথ্যাকে চাই নি বলেই এত সবুর করতে হল। সত্য হয়তো এবার দয়া করবেন।— ও কে ও, মাসি ও কে।

মাসি। কই, কেউ তো না, যতীন।

যতীন। তুমি একবার ও-ঘরটা দেখে এসোগে, আমি যেন—

মাসি। না বাছা, কাউকে দেখছি নে।

যতীন। আমি কিন্তু স্পষ্ট যেন—