প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
“প্রতিজ্ঞা রাখা না-রাখার দায়িত্ব ওরই, না-হয় ভাঙত, না-হয় করত অপরাধ।”
“ভাঙতে ভাঙতে আশেপাশে ভাঙচুর করত বিস্তর, লোকসান হত আমাদের সকলেরই।”
“ও কিন্তু বড়ো কান্নাকাটি করছে।”
“তা হলে কান্নাকাটির দিন আর বাড়তে দেব না— কাল-পরশুর মধ্যেই বিয়ে চুকিয়ে দেওয়া যাবে।”
“কাল-পরশুর পরেও তো ওর সমস্ত জীবনটাই আছে।”
“মেয়েদের বিয়ের আগেকার কান্না প্রভাতে মেঘডম্বরং।”
“আপনি নিষ্ঠুর!”
“কেননা, মানুষকে যে-বিধাতা ভালোবাসেন, তিনি নিষ্ঠুর, জন্তুকেই তিনি প্রশ্রয় দেন।”
“আপনি জানেন উমা সুকুমারকে ভালোবাসে।”
“সেইজন্যেই ওকে তফাত করতে চাই।”
“ভালোবাসার শাস্তি?”
“ভালোবাসার শাস্তির কোনো মানে নেই। তা হলে বসন্ত রোগ হয়েছে বলেও শাস্তি দিতে হয়। কিন্তু গুটি বেরোলে ঘর থেকে বের করে রোগীকে হাঁসপাতালে পাঠানোই শ্রেয়।”
“সুকুমারের সঙ্গে বিয়ে দিলেই তো হয়।”
“সুকুমার তো কোনো অপরাধ করে নি। ওর মতো ছেলে আমাদের মধ্যে কজন আছে?”
“ও যদি নিজেই উমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়?”
“অসম্ভব নয়। সেইজন্যেই এত তাড়া। ওর মতো উঁচুদরের পুরুষের মনে বিভ্রম ঘটানো মেয়েদের পক্ষে সহজ; সৌজন্যকে প্রশ্রয় বলে সুকুমারের কাছে প্রমাণ করা দুই-এক ফোঁটা চোখের জলেই সম্ভব হতে পারে। রাগ করছ শুনে?”
“রাগ করব কেন? মেয়েরা নিঃশব্দ নৈপুণ্যে প্রশ্রয় ঘটিয়েছে আর তার দায় মানতে হয়েছে পুরুষকে, আমার অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনার অভাব নেই। সময় হয়েছে সত্যের অনুরোধে ন্যায়বিচার করবার। আমি সেটা করে থাকি বলেই মেয়েরা আমাকে দেখতে পারে না। যার সঙ্গে উমার বিয়ের হুকুম সেই ভোগীলালের মত কী?”
“সেই নিষ্কণ্টক ভালোমানুষের মতামত বলে কোনো উপসর্গ নেই। বাঙালির মেয়েমাত্রকেই সে বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি বলে জানে। ওরকম মুগ্ধ স্বভাবের ছেলেকে দলের বাইরের আঙিনায় সরিয়ে ফেলা দরকার। জঞ্জাল ফেলার সব-চেয়ে ভালো ঝুড়ি বিবাহ।”
“এই সমস্ত উৎপাতের আশঙ্কা সত্ত্বেও আপনি মেয়ে-পুরুষকে একত্র করেছেন কেন?”
“শরীরটাতে ছাই দিয়েছে যে-সন্ন্যাসী, আর প্রবৃত্তিকে ছাই করেছে যে-ভস্মকুণ্ড সেই ক্লীবদের নিয়ে কাজ হবে না বলে। যখন দেখব আমাদের দলের কোনো অগ্নি-উপাসক অসাবধানে নিজের মধ্যেই অগ্নিকাণ্ড করতে বসেছে— দেব তাদের সরিয়ে। আমাদের অগ্নিকাণ্ড দেশ জুড়ে, নেবানো মন দিয়ে তা হবে না, আর হবে না তাদের দিয়ে আগুন যারা চাপতে জানে না।”
গম্ভীর মুখে এলা বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে চোখ নামিয়ে বললে, “আমাকে আপনি তবে ছেড়ে দিন।”
“এতখানি ক্ষতি করতে বল কেন?”
“আপনি জানেন না।”
“জানি নে কে বললে? দেখা গেল একদিন তোমার খদ্দরে একটুখানি রঙ লেগেছে। জানা গেল অন্তরে অরুণোদয়। বুঝতে