প্রজাপতির নির্বন্ধ
                        হৃদয় দিতেছে উদাসিয়া।
                        চল্‌ ওরে এই খেপা বাতাসেই
                        সাথে নিয়ে সেই উদাসীরে।

বিপিন। বাঃ বেশ! কিন্তু শ্রীশ, শেল্‌ফের কাছে তুমি কী খুঁজে বেড়াচ্ছ?

শ্রীশ। সেই-যে সেদিন যে বইটাতে দুটি নাম লেখা দেখেছিলাম, সেইটে–

বিপিন। না ভাই, আজ ও-সব নয়!

শ্রীশ। কী-সব নয়?

বিপিন। তাঁদের কথা নিয়ে কোনোরকম–

শ্রীশ। কী আশ্চর্য বিপিন! তাঁদের কথা নিয়ে আমি কি এমন কোনো আলোচনা করতে পারি যাতে–

বিপিন। রাগ কোরো না ভাই– আমি নিজের সম্বন্ধেই বলছি, এই ঘরেই আমি অনেক সময় রসিকবাবুর সঙ্গে তাঁদের বিষয়ে যে ভাবে আলাপ করেছি আজ সে ভাবে কোনো কথা উচ্চারণ করতেও সংকোচ বোধ হচ্ছে– বুঝছ না–

শ্রীশ। কেন বুঝব না? আমি কেবল একখানি বই খুলে দেখবার ইচ্ছে করেছিলুম মাত্র– একটি কথাও উচ্চারণ করতুম না!

বিপিন। না, আজ তাও না। আজ তাঁরা আমাদের সম্মুখে বেরোবেন, আজ আমরা যেন তার যোগ্য থাকতে পারি।

শ্রীশ। বিপিন, তোমার সঙ্গে–

বিপিন। না ভাই, আমার সঙ্গে তর্ক কোরো না, আমি হারলুম– কিন্তু বইটা রাখো।

রসিকের প্রবেশ

রসিক। এই-যে, আপনারা এসে একলা বসে আছেন, কিছু মনে করবেন না–

শ্রীশ। কিছু না। এই ঘরটি আমাদের সাদর সম্ভাষণ করে নিয়েছিল।

রসিক। আপনাদের কত কষ্টই দেওয়া গেল!

শ্রীশ। কষ্ট আর দিতে পারলেন কই? একটা কষ্টের মতো কষ্ট স্বীকার করবার সুযোগ পেলে কৃতার্থ হতুম।

রসিক। যা হোক, অল্পক্ষণের মধ্যেই চুকে যাবে এই এক সুবিধে, তার পরেই আপনারা স্বাধীন। ভেবে দেখুন দেখি যদি এটা সত্যকার ব্যাপার হত তা হলেই পরিণামে বন্ধনভয়ং! বিবাহ জিনিসটা মিষ্টান্ন দিয়েই শুরু হয়, কিন্তু সকল সময় মধুরেণ সমাপ্ত হয় না। আচ্ছা, আজ আপনারা দুঃখিতভাবে এরকম চুপচাপ করে বসে আছেন কেন বলুন দেখি। আমি বলছি আপনাদের কোনো ভয় নেই। আপনারা বনের বিহঙ্গ, দুটিখানি সন্দেশ খেয়েই আবার বনে উড়ে যাবেন, কেউ আপনাদের বাঁধবে না। নাত্র ব্যাধশরাঃ পতন্তি পরিতো নৈবাত্র দাবানলঃ। দাবানলের পরিবর্তে ডাবের জল পাবেন।

শ্রীশ। আমাদের সে দুঃখ নয় রসিকবাবু! আমরা ভাবছি আমাদের দ্বারা কতটুকু উপকারই বা হচ্ছে। ভবিষ্যতের সমস্ত আশঙ্কা তো দূর করতে পারছি নে।

রসিক। বিলক্ষণ! যা করছেন তাতে আপনারা দুটি অবলাকে চিরকৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ করছেন– অথচ নিজেরা কোনোপ্রকার পাশেই বদ্ধ হচ্ছেন না।

জগত্তারিণী। (নেপথ্যে মৃদুস্বরে) আঃ নেপ, কী ছেলেমানুষি করছিস! শিগ্‌‍গির চোখের জল মুছে ঘরের মধ্যে যা! লক্ষ্মী মা আমার– কেঁদে চোখ লাল করলে কিরকম ছিরি হবে ভেবে দেখ্‌ দেখি!– নীর, যা-না! তোদের সঙ্গে আর পারি নে বাপু!