মুকুট
পঞ্চম দৃশ্য
শিবির
রাজধর ও ধুরন্ধর

রাজধর। ধুরন্ধর, আমার মুকুট যেখানে গিয়েছে আমাদের যুদ্ধজয়কেও সেই কর্ণফুলির জলে জলাঞ্জলি দেব।

ধুরন্ধর। আবার হারবে নাকি?

রাজধর। হাঁ, এবার হেরে জিতব। ইন্দ্রকুমারের অহংকারকে ধুলোয় না লুটিয়ে দিয়ে আমি ফিরব না। আমার হাতের জিতকে তিনি গ্রহণ করবেন না! দেখি,এবার নিজে তিনি কেমন জিততে পারেন।

ধুরন্ধর। অত বেশি নিশ্চিন্ত হোয়ো না, দৈবাৎ জিতে যেতেও পারে। সত্যি কথায় রাগ করলে চলবে না, যুদ্ধবিদ্যাটা ইন্দ্রকুমার একটু শিখেছে।

রাজধর। আচ্ছা, সে-সব তর্ক পরে হবে। এখন তোমাকে একটি কাজ করতে হবে। আরাকান-রাজ সৈন্য নিয়ে কাল প্রাতেই যাত্রা করবেন। কথা আছে যতদিন না তিনি চট্টগ্রামের সীমানা পেরিয়ে যাবেন ততদিন তাঁর সেনাপতিরা আমার শিবিরে বন্দী থাকবেন। তিনি শিবির তোলবার পূর্বেই আজ রাত্রে গোপনে তাঁর কাছে তুমি আমার এই চিঠিখানি নিয়ে যাবে।

ধুরন্ধর। চিঠিতে কী আছে সেটা তো আমার জানা ভালো। কেননা, যদি দুটো-একটা কথা বলবার দরকার হয় তা হলে বলে কাজটা চুকিয়ে আসতে পারব।

রাজধর। আমি লিখেছি আমি অপমানিত হয়েছি, এইজন্য আমার ভাইদের কাছ থেকে আমি অবসর নিলুম। আমার পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে আমি গৃহে ফেরবার ছলে দূরে চলে যাব, ইন্দ্রকুমারও দাদার উপর অভিমান করে চলে গেছে, সৈন্যেরাও যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে জেনে ফেরবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে—এই অবকাশে যদি আরাকান-রাজ সহসা আক্রমণ করেন তা হলে ত্রিপুরার সৈন্যদের নিশ্চয় হার হবে।

ধুরন্ধর। হার তো হবে। তার পরে? তুমি-সুদ্ধ শেষে হায় হায় করে মরবে না তো! আগুন যদি লাগাতে হয় তো নিজের ঘরের চালটা সামলে লাগাতে হবে।

রাজধর। আমাকে সাবধান করে দেবার জন্যে আর-কারও বুদ্ধির প্রয়োজন হবে না। তুমি প্রস্তুত হও গে—দেখো, কেউ যেন জানতে না পারে। আমার সৈন্যেরা যদি কোনোমতে সন্দেহ করে তা হলে সমস্তই পণ্ড হবে।

ধুরন্ধর। দেখো রাজধর, আমাকে সাবধান করে দেবার জন্যেও আর-কারও বুদ্ধির প্রয়োজন হবে না-তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।