প্রজাপতির নির্বন্ধ

পূর্ণ। চমৎকার হয়েছে রসিকবাবু!
                        প্রিয়চক্ষু-দেখাদেখি যে আনন্দ তাই সে কি খুঁজিছে চঞ্চল?
অথচ সে বেচারা বন্দী খাঁচার পাখির মতো কেবল এ পাশে ও পাশে ছট্‌ফট্‌ করে– প্রিয়চক্ষু যেখানে, সেখানে পাখা মেলে উড়ে যেতে পারে না।

রসিক। আবার দেখাদেখির ব্যাপারখানাও যে কিরকম নিদারুণ তাও শাস্ত্রে লিখেছে–
                        হত্বা লোচনবিশিখৈর্গত্বা কতিচিৎ পদানি পদ্মাক্ষী
                        জীবতি যুবা ন বা কিং ভূয়ো ভূয়ো বিলোকয়তি।
                                            ----
                                বিঁধিয়া দিয়া আঁখিবাণে
                                যায় সে চলি গৃহপানে,
                                জনমে অনুশোচনা–
                                বাঁচিল কি না দেখিবারে
                                চায় সে ফিরে বারে বারে
                                কমলবরলোচনা!

পূর্ণ। রসিকবাবু, বারে বারে ফিরে চায় কেবল কাব্যে।

রসিক। তার কারণ, কাব্যে ফিরে চাবার কোনো অসুবিধে নেই। সংসারটা যদি ঐরকম ছন্দে তৈরি হত তা হলে এখানেও ফিরে ফিরে চাইত পূর্ণবাবু– এখানে মন ফিরে চায়, চক্ষু ফেরে না।

পূর্ণ। (সনিশ্বাসে) বড়ো বিশ্রী জায়গা রসিকবাবু! কিন্তু ওটা আপনি বেশ বলেছেন– প্রিয়চক্ষু-দেখাদেখি যে আনন্দ তাই সে কি খুঁজিছে চঞ্চল?

রসিক। আহা পূর্ণবাবু, নয়নের কথা যদি উঠল ও আর শেষ করতে ইচ্ছা করে না–
                                        লোচনে হরিণগর্বমোচনে
                                        মা বিদূষয় নতাঙ্গি কজ্জলৈঃ।
                                        সায়কঃ সপদি জীবহারকঃ
                                        কিং পুনর্হি গরলেন লেপিতঃ?
                                                -----
                                        হরিণগর্বমোচন লোচনে
                                        কাজল দিয়ো না সরলে!
                                        এমনি তো বাণ নাশ করে প্রাণ,
                                        কী কাজ লেপিয়া গরলে?

পূর্ণ। থামুন রসিকবাবু, থামুন। ঐ বুঝি কারা আসছেন।

চন্দ্রবাবু ও নির্মলার প্রবেশ