প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
নীরজা। হোক-না, হোক-না! বেশ তো! এমনি চলুক-না কিছুদিন, যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনিই পড়বে ধরা। তখন বুঝবে মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। ওঁর সরলার চেয়ে বাগানের দরদ কেউ জানে না! চুপ করে থাক্-না, দর্পহারী মধুসূদন আছেন।
রোশনি। কিন্তু তাও বলি খোঁখী, তোমার ঐ হলা মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া যায় না।
নীরজা। আমি মালীকে দোষ দিই নে। নতুন মনিবকে ও সইবে কেমন করে? ওদের হল সাতপুরুষে মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড়া বিদ্যে। ওকে হুকুম করতে আসে। হলা আমার কাছে নালিশ করেছিল, শুধিয়েছিল এ-সব ছিষ্টিছাড়া আইন মানতে হবে না কি? আমি ওকে বলে দিলুম— ‘শুনিস্ কেন? চুপ করে থাক্, কিচ্ছু করতে হবে না।’
রোশনি। সেদিন জামাইবাবু রাগ করে ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিলেন। বাগানে গোরু ঢুকেছিল। তিনি বললেন, ‘গোরু তাড়াস-নে কেন? ’ ও মুখের উপর জবাব করলে, ‘আমি তাড়াব গোরু? গোরুই তো আমাকে তাড়া করে। আমার প্রাণের ভয় নেই? ’
নীরজা। তা যাই হোক, ও যাই করুক, ও আমার নিজের হাতে তৈরি। ওকে তাড়িয়ে বাগানে নতুন লোক আনলে, সে আমি সইতে পারব না। তা গোরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি সে আমি কি বুঝি নে? ওর যে আগুন জ্বলেছে বুকে।—ঐ যে হলা চলেছে দাঁতন করতে করতে দিঘির দিকে। ডাক্ তো ওকে।
রোশনি। হলা, হলা।
নীরজা। কী রে, আজকাল নতুন ফরমাশ আছে কিছু?
হলা। আছে বৈকি বউদিদি, শুনে চোখে জল আসে।
নীরজা। কী রকম?
হলা। পাশে মল্লিকদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, হুকুম হল তারি ইঁট-পাটকেল সব গাছের গোড়ায় গোড়ায় দিতে। আমি বললুম, রোদের বেলা গরম লাগবে গাছের। কান দেয় না আমার কথায়।
নীরজা। বাবুকে বলিস-নে কেন?
হলা। বলেছিলুম। বাবু ধমক দিয়ে বললে, চুপ করে থাক্। বউদিদি, আমাকে ছুটি দাও, আমি তো আর এ সইতে পারি নে।
নীরজা। তাই দেখেছি বটে তুই ঝুড়ি করে রাবিশ বয়ে আনছিলি।
হলা। বউদিদি, তুমিই তো আমার চিরদিনের মনিব— তোমার চোখের সামনে আমার এত অপমান ঘটতে দেবে?
নীরজা। আচ্ছা যা, তোদের দিদিমণি যখন তোকে ইঁটসুরকি বইতে বলবে বলিস আমি তোকে বারণ করেছি। এখন যা—দাঁড়িয়ে রইলি যে?
হলা। দেশ থেকে চিঠি এসেছে হালের গোরু একটা মারা গেছে। না কিনতে পারলে চাষ বন্ধ। কাকে জানাব দুঃখ!
নীরজা। সব তোর মিথ্যে কথা।
হলা। মিথ্যে হলেও তো দয়া করতে হয়। হলা তোমার দুঃখী তো বটে।
নীরজা। আচ্ছা সে হবে। রোশনি, সরকারবাবুকে বলে দিস ওকে দুটো টাকা দেবে। আবার কী! যা চলে।