মালিনী
কেঁদেছে সংশয়ে। আজ আমি লভিয়াছি
ধর্ম মোর, হৃদয়ের বড়ো কাছাকাছি।
সবার দেবতা তব, শাস্ত্রের দেবতা—
আমার দেবতা নহে। প্রাণ তার কোথা,
আমার অন্তরমাঝে কই কহে কথা,
কী প্রশ্নের দেয় সে উত্তর— কী ব্যথার
দেয় সে সান্ত্বনা! আজি তুমি কে আমার
জীবনতরণী-’পরে রাখিলে চরণ—
সমস্ত জড়তা তার করিয়া হরণ
একি গতি দিলে তারে! এতদিন পরে
এ মর্তধরণীমাঝে মানবের ঘরে
পেয়েছি দেবতা মোর।
ক্ষেমংকর। হায় হায় সখে,
আপন হৃদয় যবে ভুলায় কুহকে
আপনারে, বড়ো ভয়ংকর সে সময়—
শাস্ত্র হয় ইচ্ছা আপনার, ধর্ম হয়
আপন কল্পনা। এই জ্যোৎস্নাময়ী নিশি
যে সৌন্দর্যে দিকে দিকে রহিয়াছে মিশি
ইহাই কি চিরস্থায়ী? কাল প্রাতঃকালে
শতলক্ষ ক্ষুধাগুলা শতকর্মজালে
ঘিরিবে না ভবসিন্ধু— মহাকোলাহলে
হবে না কঠিন রণ বিশ্বরণস্থলে?
তখন এ জ্যোৎস্নাসুপ্তি স্বপ্নমায়া বলে
মনে হবে, অতি ক্ষীণ, অতি ছায়াময়।
যে সৌন্দর্যমোহ তব ঘিরেছে হৃদয়
সেও সেই জোৎস্নাসম— ধর্ম বল তারে?
একবার চক্ষু মেলি চাও চারি ধারে—
কত দুঃখ, কত দৈন্য, বিকট নিরাশা!
ওই ধর্মে মিটাইবে মধ্যাহ্নপিপাসা
তৃষ্ণাতুর জগতের? সংসারের মাঝে
ওই তব ক্ষীণ মোহ লাগিবে কী কাজে?
খররৌদ্রে দাঁড়াইয়া রণরঙ্গভূমে