প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কুমু হেসে বললে, “না হয় তাই হল। মরণের অপরাধ কী?”
মোতির মা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠল, “অমন কথা বলো না।” কুমু জানে না, অল্পদিন হল ওদেরই পাড়াতে একটি সতেরো বছরের বউ কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার এম. এ. পাস-করা স্বামী— গবর্মেন্ট আপিসে বড়ো চাকরি করে। স্ত্রী খোঁপায় গোঁজবার একটা রুপোর চিরুনি হারিয়ে ফেলেছে, মা’র কাছ থেকে এই নালিশ শুনে লোকটা তাকে লাথি মেরেছিল। মোতির মার সেই কথা মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দিলে।
এমন সময় নবীনের প্রবেশ। কুমু খুশি হয়ে উঠল। বলল, “জানতুম ঠাকুরপোর আসতে বেশি দেরি হবে না।”
নবীন হেসে বললে, “ন্যায়শাস্ত্রে বউরানীর দখল আছে, আগে দেখেছেন শ্রীমতী ধোঁয়াকে, তার থেকে শ্রীমান আগুনের আবির্ভাব হিসেব করতে শক্ত ঠেকে নি।”
মোতির মা বললে, “বউরানী, তুমিই ওকে নাই দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছ। ও বুঝে নিয়েছে ওকে দেখলে তুমি খুশ হও, সেই দেমাকে—”
“আমাকে দেখলেও খুশি হতে পারেন যিনি, তাঁর কি কম ক্ষমতা? যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনিও নিজের হাতের কাজ দেখে অনুতাপ করেন, আর যিনি আমার পাণিগ্রহণ করেছেন তাঁর মনের ভাব দেবা ন জানন্তি কুতো মনুষ্যাঃ!”
“ঠাকুরপো, তোমরা দুজনে মিলে কথা-কাটাকাটি করো, তৃতীয় ব্যক্তি ছন্দোভঙ্গ করতে চায় না, এখন আমি চললুম।”
মোতির মা বললে, “সে কি কথা ভাই! এখানে তৃতীয় ব্যক্তিটা কে? তুমি না আমি? গাড়িভাড়া করে ও কি আমাকে দেখতে এসেছে ভেবেছ?”
“না, ওর জন্যে খাবার বলে দিই গে।” বলে কুমু চলে গেল।
মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “কিছু খবর আছে বুঝি?”
“আছে। দেরি করতে পারলুম না, তোমার সঙ্গে পরামর্শ করতে এলুম। তুমি তো চলে এলে, তার পরে দাদা হঠাৎ আমার ঘরে এসে উপস্থিত। মেজাজটা খুবই খারাপ। সামান্য দামের একটা গিল্টি-করা চুরোটের ছাইদান টেবিল থেকে অদৃশ্য হয়েছে। সম্প্রতি যার অধিকারে সেটা এসেছে তিনি নিশ্চয়ই সেটাকে সোনা বলেই ঠাউরেছেন, নইলে পরকাল খোয়াতে যাবেন কোন্ সাধে। জান তো তুচ্ছ একটা জিনিস নড়ে গেলে দাদার বিপুল সম্পত্তির ভিতটাতে যেন নাড়া লাগে, সে তিনি সইতে পারেন না। আজ সকালে আপিসে যাবার সময় আমাকে বলে গেলেন শ্যামাকে দেশে পাঠাতে। আমি খুব উৎসাহের সঙ্গেই সেই পবিত্র কাজে লেগেছিলুম। ঠিক করেছিলুম তিনি আপিস থেকে ফেরবার আগেই কাজ সেরে রাখব। এমন সময়ে বেলা দেড়টার সময় হঠাৎ দাদা একদমে আমার ঘরে এসে ঢুকে পড়লেন। বললেন, এখনকার মতো থাক্। যেই ঘর থেকে বেরোতে যাচ্ছেন, আমার ডেক্সের উপর বউরানীর সেই ছবিটি চোখে পড়ল। থমকে গেলেন। বুঝলুম আড়-চাহনিটাকে সিধে করে নিয়ে ছবিটিকে দেখতে দাদার লজ্জা বোধ হচ্ছে। বললুম, “দাদা, একটু বোসো, একটা ঢাকাই কাপড় তোমাকে দেখাতে চাই। মোতির মা’র ছোটো ভাজের সাধ, তাই তাকে দিতে হবে। কিন্তু গণেশরাম দামে আমাকে ঠকাচ্ছে বলে বোধ হচ্ছে। তোমাকে দিয়ে সেটা একবার দেখিয়ে নিতে চাই। আমার যতটা