প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
এইখানে ভাইবোনের মধ্যে প্রভেদ আছে। কুমু তার বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসত, জানত তাঁর হৃদয় কত কোমল। সমস্ত অপরাধ কাটিয়েও তার বাবা ছিলেন খুব বড়ো এ কথা না মনে করে সে থাকতে পারত না, এমন-কি, তার বাবার জীবনে যে শোচনীয় পরিণাম ঘটেছিল সেজন্যে সে তার মাকেই মনে মনে দোষ দিয়েছে।
বিপ্রদাসও তার বাবাকে বড়ো বলেই ভক্তি করেছে। কিন্তু বারে বারে স্খলনের দ্বারা তার মাকে তিনি সকলের কাছে অসম্মানিত করতে বাধা পান নি এটা সে কোনোমতে ক্ষমা করতে পারলে না। তার মাও ক্ষমা করেন নি বলে বিপ্রদাস মনের মধ্যে গৌরব বোধ করত।
বিপ্রদাস বললে, “আমার মা যে অপমান পেয়েছিলেন তাতে সমস্ত স্ত্রীজাতির অসম্মান। কুমু, তুই ব্যক্তিগতভাবে নিজের কথা ভুলে সেই অসম্মানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবি, কিছুতে হার মানবি নে।”
কুমু মুখ নিচু করে আস্তে আস্তে বললে, “বাবা কিন্তু মাকে খুব ভালোবাসতেন সে কথা ভুলো না দাদা। সেই ভালোবাসায় অনেক পাপের মার্জনা হয়।”
বিপ্রদাস বললে, “তা মানি, কিন্তু এত ভালোবাসা সত্ত্বেও তিনি এত সহজে মায়ের সম্মানহানি করতে পারতেন, সে পাপ সমাজের। সমাজকে সেজন্য ক্ষমা করতে পারব না, সমাজের ভালোবাসা নেই, আছে কেবল বিধান।”
“দাদা, তুমি কি কিছু শুনেছ?”
“হাঁ শুনেছি, সে-সব কথা তোকে আস্তে আস্তে পরে বলব।”
“সেই ভালো। আমার ভয় হচ্ছে আজকেকার এই-সব কথাবার্তায় তোমার শরীর আরো দুর্বল হয়ে যাবে।”
“না কুমু, ঠিক তার উলটো। এতদিন দুঃখের অবসাদে শরীরটা যেন এলিয়ে পড়ছিল। আজ যখন মন বলছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে, আমার শরীরের ভিতর থেকে শক্তি আসছে।”
“কিসের লড়াই দাদা?”
“যে সমাজ নারীকে তার মূল্য দিতে এত বেশি ফাঁকি দিয়েছে তার সঙ্গে লড়াই।”
“তুমি তার কী করতে পার দাদা?”
“আমি তাকে না মানতে পারি। তা ছাড়া আরো আরো কী করতে পারি সে আমাকে ভাবতে হবে, আজ থেকেই শুরু হল কুমু। এই বাড়িতে তোর জায়গা আছে, সে সম্পূর্ণ তোর নিজের, আর-কারো সঙ্গে আপস করে নয়। এইখানেই তুই নিজের জোরে থাকবি।”
“আচ্ছা দাদা, সে হবে, কিন্তু আর তুমি কথা কোয়ো না।”
এমন সময় খবর এল, মোতির মা এসেছে।