প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মধুসূদন অবজ্ঞা করে সংক্ষেপে বললে, “যাক-না।”
ব্যাস্তসমস্ত হয়ে একটা কেদারা দেখিয়ে দিয়ে বিপ্রদাস বললে, “আসুন নবীনবাবু, এইখানে বসুন।”
নবীন বললে, “আমার পরিচয়টা পান নি বোধ হচ্ছে। মনে করেছেন আমি রাজবাড়ির কোন্ আদুরে ছেলে। যিনি আপনার ছোটো বোন, আমি তাঁর অধম সেবক, আমাকে সম্মান করে আমার আশীর্বাদটা ফাঁকি দেবেন না। কিন্তু করেছেন কী? আপনার অমন শরীরের কেবল ছায়াটি বাকি রেখেছেন!”
“শরীরটা সত্য নয়, ছায়া, মাঝে মাঝে সে খবরটা পাওয়া ভালো। ওতে শেষের পাঠ এগিয়ে থাকে।” কুমু ঘরে ঢুকেই বললে, “ঠাকুরপো, চলো কিছু খাবে।”
“খাব, কিন্তু একটা শর্ত আছে। যতক্ষণ পূরণ না হবে, ব্রাহ্মণ অতিথি অভুক্ত তোমার দ্বারে পড়ে থাকবে।”
“শর্তটা কী শুনি।”
“আমাদের বাড়িতে থাকতেই দরবার জানিয়ে রেখেছিলুম কিন্তু সেখানে জোর পাই নি। ভক্তকে একখানি ছবি তোমায় দিতে হবে। সেদিন বলেছিলে নেই, আজ তা বলবার জো নেই, তোমার দাদার ঘরের দেয়ালে ঐ তো সামনেই ঝুলছে।”
ভালো ছবি দৈবাৎ হয়ে থাকে, কুমুর ঐ ছবিটি তেমনি যেন দৈবের রচনা। কপালে যে আলোটি পড়লে কুমুর মনের চেহারাটি মুখে প্রকাশ পায়, সেই আলোটিই পড়েছিল। ললাটে নির্মল বুদ্ধির দীপ্তি, চোখে গভীর সারল্যের সকরুণতা। দাঁড়ানো ছবি। কুমুর সুন্দর ডান হাতটি একটি শূন্য চৌকির হাতার উপরে। মনে হয় যেন সামনে ও আপনারই একটা দূরকালের ছায়া দেখতে পেয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়েছে।
নিজের এই ছবিটি কুমুর চোখে পড়ে নি। কলকাতা থেকে ছবিওয়ালা আনিয়ে বিবাহের কয়দিন আগে ওর দাদা এটি তুলিয়েছিল। তার পরে নিজের ঘরে ছবিটি টাঙিয়েছে, এইটেতে কুমুর হৃদয় আর্দ্র হয়ে গেল। ফোটোগ্রাফের কপি আরো নিশ্চয় আছে, তাই দাদার মুখের দিকে চাইলে। নবীন বললে, “বুঝতে পারছেন বিপ্রদাসবাবু, বউরানীর দয়া হয়েছে। দেখুন-না, ওঁর চোখের দিকে চেয়ে। অযোগ্য বলেই আমার প্রতি ওঁর একটু বিশেষ করুণা।”
বিপ্রদাস হেসে বললে, “কুমু, আমার ঐ চামড়ার বাক্সয় আরো খানকয়েক ছবি আছে, তোর ভক্তকে বরদান করতে চাস যদি তো অভাব হবে না।”
কুমু নবীনকে খাওয়াতে নিয়ে গেলে পর কালু এল ঘরে। বললে, “আমি মেজোবাবুকে তার করেছি, শীঘ্র চলে আসবার জন্যে।”
“আমার নামে?”
“হ্যাঁ, তোমারই নামে দাদা। আমি জানি, তুমি শেষ পর্যন্ত হাঁ-না করবে, এ দিকে সময় বড়ো কঠিন হয়ে আসছে। ডাক্তারের কাছে যা শোনা গেল,তোমার উপর এত চাপ সইবে না।”
ডাক্তার বলেছে হৃদ্যন্ত্রের বিকারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, শরীরমন শান্ত রাখা চাই। এক সময়ে বিপ্রদাসের যে অতিরিক্ত কুস্তির নেশা ছিল এটা তারই ফল, তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে মনের উদ্বেগ।
সুবোধকে এরকম জোর-তলব করে ধরে আনা ভালো হবে কি না বিপ্রদাস বুঝতে পারলে না; চুপ করে ভাবতে লাগল। কালু বললে, “বড়োবাবু, মিথ্যে ভাবছ, বিষয়কর্মের একটা শেষ ব্যবস্থা এখনই করা চাই, আর এতে তাঁকে না হলে চলবে না। বারো