প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
“দাদা কবে আসবেন?”
“হপ্তাখানেকের মধ্যে।”
মধু নিশ্চিত জানত কালই বিপ্রদাস আসবে, ‘হপ্তাখানেক’ কথাটা ব্যবহার করে খবরটাকে অনির্দিষ্ট করে রেখে দিলে।
“দাদার শরীর কি আরো খারাপ হয়েছে?”
“না, তেমন কিছু তো শুনলুম না।”
এ কথাটার মধ্যেও একটুখানি পাশ-কাটানো ছিল। বিপ্রদাস চিকিৎসার জন্যই কলকাতায় আসছে— তার অর্থ, শরীর অন্তত ভালো নেই।
“দাদার চিঠি কি এসেছে?”
“চিঠির বাক্স তো এখনো খুলি নি, যদি থাকে তোমাকে পাঠিয়ে দেব।”
কুমু মধুসূদনের কথা অবিশ্বাস করতে আরম্ভ করে নি, সুতরাং এ কথাটাও মেনে নিলে।
“দাদার চিঠি এসেছে কি না একবার খোঁজ করবে কি?”
“যদি এসে থাকে, খাওয়ার পরে দুপুরবেলা নিজেই নিয়ে আসব।”
কুমু অধৈর্য দমন করে নীরবে সম্মত হল। তখন আর-একবার মধুসূদন কুমুর হাতখানা টেনে নেবার উপক্রম করছে এমন সময় শ্যামা হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকেই বলে উঠল, “ওমা, ঠাকুরপো যে!” বলেই বেরিয়ে যেতে উদ্যত।
মধুসূদন বললে, “কেন, কী চাই তোমার?”
“বউকে ভাঁড়ারে ডাকতে এসেছি। রাজরানী হলেও ঘরের লক্ষ্মী তো বটে; তা আজ না-হয় থাক্।” মধুসূদন সোফা থেকে উঠে কোনো কথা না বলে দ্রুত বাইরে চলে গেল।
আহারের পর যথারীতি শোবার ঘরের খাটে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পান চিবোতে চিবোতে মধুসূদন কুমুকে ডেকে পাঠালে। তাড়াতাড়ি কুমু চলে এল। সে জানে আজ দাদার চিঠি পাবে। শোবার ঘরে ঢুকে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
মধুসূদন গুড়গুড়ির নলটা রেখে পাশে দেখিয়ে দিয়ে বললে, “বোসো।”
কুমু বসল। মধুসূদন তাকে যে চিঠি দিলে তাতে কেবল এই কয়টি কথা আছে—
প্রাণপ্রতিমাসু
শুভাশীর্বাদরাশয়ঃ সন্তু
চিকিৎসার জন্য শীঘ্রই কলিকাতায় যাইতেছি। সুস্থ হইলে তোমাকে দেখিতে যাইব।
গৃহকর্মের অবকাশমত মাঝে মাঝে কুশলসংবাদ দিলে নিরুদ্বিগ্ন হই।
এই ছোটো চিঠিটুকু মাত্র পেয়ে কুমুর মনে প্রথমে একটা ধাক্কা লাগল। মনে মনে বললে, ‘পর হয়ে গেছি।’ অভিমানটা প্রবল হতে না হতেই মনে এল, ‘দাদার হয়তো শরীর ভালো নেই, আমার কী ছোটো মন! নিজের কথাটাই সব-আগে মনে পড়ে।’
মধুসূদন বুঝতে পারলে কুমু উঠি-উঠি করছে; বললে, “যাচ্ছ কোথায়, একটু বোসো।”
কুমুকে তো বসতে বললে, কিন্তু কী কথা বলবে মাথায় আসে না। অবিলম্বে কিছু বলতেই হবে, তাই সকাল থেকে যে কথাটা নিয়ে ওর মনে খটকা রয়েছে সেইটেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। বললে, “সেই এলাচদানার ব্যাপারটা নিয়ে এত হাঙ্গামা করলে কেন? ওতে লজ্জার কথা কী ছিল?”
“ও আমার গোপন কথা।”