প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “ঐ কাগজে কী মোড়া আছে?”
“জানি নে।”
“জান না, তার মানে কী?”
“তার মানে আমি জানি নে।”
মধুসূদন কথাটা বিশ্বাস করলে না; বললে, “আমাকে দাও, আমি দেখি।”
কুমু বললে, “ও আমার গোপন জিনিস, দেখাতে পারব না।”
তীরের মতো তীক্ষ্ম একটা রাগ এক মুহূর্তে মধুসূদনের মাথায় চড়ে উঠল। বললে, “কী! আস্পর্ধা তো কম নয়।” বলে জোর করে সেই কাগজের মোড়ক কেড়ে নিয়ে খুলে ফেললে— দেখে যে কিছুই নয়, কতকগুলি এলাচদানা। মাতার সস্তা ব্যবস্থায় হাবলুর জন্যে যে জলখাবার বরাদ্দ তার মধ্যে এইটেই বোধ করি সব চেয়ে হাবলুর পক্ষে লোভনীয়— তাই সে গর্ব করে মুড়ে এনেছিল।
মধুসূদন অবাক! ব্যাপারখানা কী। ভাবলে বাপের বাড়িতে এইরকম জলখাবারই কুমুর অভ্যস্ত— তাই লুকিয়ে আনিয়ে নিয়েছে, লজ্জায় প্রকাশ করতে চায় না। মনে মনে হাসলে; ভাবলে, লক্ষ্মীর দান গ্রহণ করতে সময় লাগে। ধাঁ করে একটা প্ল্যান মাথায় এল। দ্রুত উঠে বাইরে গেল চলে।
কুমু তখন দেরাজ খুলে বের করলে তার একটি ছোটো চৌকো চন্দনকাঠের বাক্স, তার মধ্যে এলাচদানাগুলি রেখে তার দাদাকে চিঠি লিখতে বসল। দু-চার লাইন লেখা হতেই মধুসূদন ঘরে এসে উপস্থিত। তাড়াতাড়ি চিঠি চাপা দিয়ে কুমু শক্ত হয়ে বসল। মধুসূদনের হাতে রুপোয় সোনায় মিনের কাজ-করা হাতল-দেওয়া একটি ফলদানি, তার উপরে ফুলকাটা সুগন্ধি একটি রেশমের রুমাল। হাসিমুখে ডেস্কে সেটি কুমুর সামনে রাখলে। বললে, “খুলে দেখো তো।”
কুমু রুমালটা তুলে নিয়ে দেখে সেই দামী ফলদানিতে কানায়-কানায় ভরা এলাচদানা। যদি একলা থাকত হেসে উঠত। কোনো কথা না বলে কুমু গম্ভীর হয়ে চুপ করে রইল। এর চেয়ে হাসা ভালো ছিল।
মধুসূদন বললে, “এলাচদানা লুকিয়ে খাবার কী দরকার? এতে লজ্জা কী বলো! রোজ আনিয়ে দেব— কত চাও? আমাকে আগে বললে না কেন?”
কুমু বললে, “তুমি পারবে না আনিয়ে দিতে।”
“পারব না! অবাক করলে তুমি।”
“না, পারবে না।”
“অসম্ভব দাম নাকি এর!”
“হাঁ, টাকায় মেলে না।”
শুনেই মধুর মাথায় চট করে একটা সন্দেহ জাগল— বললে, “তোমার দাদা পার্সেল করে পাঠিয়েছেন বুঝি?”
এ প্রশ্নের জবাব দিতে কুমুর ইচ্ছে হল না। ফলদানিটা ঠেলে দিয়ে চলে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়াল। মধুসূদন হাত ধরে আবার জোর করে তাকে বসিয়ে দিলে।
মধুসূদনকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই কুমু তাকে প্রশ্ন করলে, “দাদার বাড়ি থেকে তোমার কাছে লোক এসেছিল তাঁর খবর নিয়ে?”
এ কথাটা কুমু আগেই শুনে ফেলেছে জেনে মধুর মন ভারি বিরক্ত হয়ে উঠল। বললে, “সেই খবর দেবার জন্যেই তো আজ সকালে তোমার কাছে এসেছি।” বলা বাহুল্য এটা মিথ্যে কথা।