যোগাযোগ

“চামচিকের পিঠে চড়ে সে আসে!”

“ইচ্ছে করলেই সে খুব ছোট্টো হতে পারে, চোখে প্রায় দেখাই যায় না।”

“সেই মন্তরটা তার কাছে শিখে নিতে হবে তো।”

“কেন, জ্যাঠাইমা?”

“আমি যদি পালাবার জন্যে কয়লার ঘরে ঢুকি তবুও যে আমাকে দেখতে পাওয়া যায়।”

হাবলু এ কথাটার কোনো মানে বুঝতে পারলে না। বললে, “কয়লার মধ্যে সিঁদুরের কৌটো লুকিয়ে রেখেছে। সেই সিঁদুর কোথা থেকে এনেছে জান?”

“বোধ হয় জানি।”

“আচ্ছা, বলো দেখি।”

“ভোরবেলাকার মেঘের ভিতর থেকে।”

হাবলু থমকে গেল। তাকে ভাবিয়ে দিলে। বিশেষ-সংবাদদাতা তাকে সাগরপারের দৈত্যপুরীর কথা বলেছিল। কিন্তু জ্যাঠাইমার কথাটা মনে হল বিশ্বাসযোগ্য, তাই কোনো বিরুদ্ধ তর্ক না তুলে বললে, “যে মেয়ে সেই কৌটো খুঁজে বের করে সিঁদুরটিপ কপালে পরবে সে হবে রাজরানী।”

“সর্বনাশ! কোনো হতভাগিনী খবর পেয়েছে নাকি?”

“সেজোপিসিমার মেয়ে খুদি জানে। ঝুড়ি নিয়ে ছন্নু যখন সকালে কয়লা বের করতে যায়, রোজ খুদি সেইসঙ্গে যায়— ও একটুও ভয় করে না।”

“ও যে ছেলেমানুষ, তাই রাজরানী হতেও ভয় নেই।”

বাইরে ঠাণ্ডা উত্তরে হাওয়া দিচ্ছিল তাই মোতিকে নিয়ে কুমু ঘরে গেল; সেখানে সোফায় বসে ওকে কোলে তুলে নিলে। পাশের তেপাইয়ে ছোটো রুপোর থালিতে ছিল শীতকালের ফুল— গাঁদা, কুন্দ, দোপাটি, জবা। প্রতিদিনের জোগানমত এই ফুলই মালীর তোলা। কুমু ছাদের কোণে বসে সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে দেবতাকে উৎসর্গ করে দেবে বলে এরা অপেক্ষা করে আছে। আজ তার সেই অনিবেদিত ফুল থালাসুদ্ধ নিয়ে সে হাবলুর কাছে ধরল; বললে, “নেবে ফুল?”

“হাঁ, নেব।”

“কী করবে বলো তো?”

“পুজো-পুজো খেলব।”

কুমুর কোমরে একটা সিল্কের রুমাল গোঁজা ছিল, সেইটেতে ফুলগুলি বেঁধে দিয়ে ওকে চুমো খেয়ে বললে, “এই নাও।” মনে মনে ভাবলে, ‘আমারও পুজো-পুজো খেলা হল।’ বললে, “গোপাল, এর মধ্যে কোন্‌ ফুল তোমার সব চেয়ে ভালো লাগে, বলো তো?”

হাবলু বললে, “জবা।”

“কেন জবা ভালো লাগে বলব?”

“বলো দেখি।”

“ও যে ভোর না হতেই জটাইবুড়ির সিঁদুরের কৌটো থেকে রঙ চুরি করেছে।”

হাবলু খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে ভাবলে। হঠাৎ বলে উঠল, “জ্যাঠাইমা, জবা ফুলের রঙ ঠিক তোমার শাড়ির এই লাল