রক্তকরবী

বিশু। লোকে বলে নীলকণ্ঠের পাখার জয়যাত্রায় শুভচিহ্ন আছে।

নন্দিনী। রঞ্জনের জয়যাত্রা আমার হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে।

বিশু। পাগলি, এখন আমি যাই আমার নিজের কাজে।

নন্দিনী। না, আজ তোমাকে কাজ করতে দেব না।

বিশু। কী করব বলো।

নন্দিনী। গান করো।

বিশু। কী গান করব?

নন্দিনী। পথ চাওয়ার গান।

বিশু।

গান

যুগে যুগে বুঝি আমায় চেয়েছিল সে।

সেই বুঝি মোর পথের ধারে রয়েছে বসে।

আজ কেন মোর পড়ে মনে,      কখন্‌ তারে চোখের কোণে

    দেখেছিলেম অফুট প্রদোষে।

সেই যেন মোর পথের ধারে রয়েছে বসে!

আজ ওই চাঁদের বরণ হবে আলোর সংগীতে,

রাতের মুখের আঁধারখানি খুলবে ইঙ্গিতে।

শুক্ল রাতে সেই আলোকে      দেখা হবে, এক পলকে

    সব আবরণ যাবে যে খসে।

সেই যেন মোর পথের ধারে রয়েছে বসে।

নন্দিনী। পাগল, যখন তুমি গান কর তখন কেবল আমার মনে হয় অনেক তোমার পাওনা ছিল, কিন্তু কিছু তোমাকে দিতে পারি নি।

বিশু। তোর সেই কিছু-না-দেওয়া আমি ললাটে পরে চলে যাব। অল্প-কিছু দেওয়ার দামে আমার গান বিক্রি করব না। — এখন কোথায় যাবি?

নন্দিনী। পথের ধারে, যেখান দিয়ে রঞ্জন আসবে। সেইখানে বসে আবার তোমার গান শুনব।

[উভয়ের প্রস্থান
সর্দার ও মোড়লের প্রবেশ

সর্দার। না, এ পাড়ায় রঞ্জনকে কিছুতে আসতে দেওয়া চলবে না।

মোড়ল। ওকে দূরে রাখব বলেই বজ্রগড়ের সুড়ঙ্গে কাজ করাতে নিয়ে গিয়েছিলুম।

সর্দার। তা, কী হল?

মোড়ল। কিছুতেই পারা গেল না। সে বললে, ‘হুকুম মেনে কাজ করা আমার অভ্যেস নে!’