প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
নেপথ্যে। ঐ তোমার সাথি? ওকে এখনই যদি তোমার সঙ্গছাড়া করি তা হলে কী হয়।
নন্দিনী। তোমার গলার সুর ও কিরকম হয়ে উঠল? থামো তুমি। তোমার কেউ সঙ্গী নেই নাকি?
নেপথ্যে। আমার সঙ্গী? মধ্যাহ্নসূর্যের কেউ সঙ্গী আছে?
নন্দিনী। আচ্ছা, থাক্ ও কথা। মা গো, তোমার হাতে ওটা কী?
নেপথ্যে। একটা মরা ব্যাঙ।
নন্দিনী। কী করবে ওকে নিয়ে?
নেপথ্যে। এই ব্যাঙ একদিন একটা পাথরের কোটরের মধ্যে ঢুকেছিল। তারই আড়ালে তিন হাজার বছর ছিল টিকে। এইভাবে কী করে টিকে থাকতে হয় তারই রহস্য ওর কাছ থেকে শিখছিলুম; কী করে বেঁচে থাকতে হয় তা ও জানে না। আজ আর ভালো লাগল না, পাথরের আড়াল ভেঙে ফেললুম, নিরন্তর টিকে-থাকার থেকে ওকে দিলুম মুক্তি। ভালো খবর নয়?
নন্দিনী। আমারও চারি দিক থেকে তোমার পাথরের দুর্গ আজ খুলে যাবে। আমি জানি, আজ রঞ্জনের সঙ্গে দেখা হবে।
নেপথ্যে। তোমাদের দুজনকে তখন একসঙ্গে দেখতে চাই।
নন্দিনী। জালের আড়ালে তোমার চশমার ভিতর দিয়ে দেখতে পাবে না।
নেপথ্যে। ঘরের ভিতরে বসিয়ে দেখব।
নন্দিনী। তাতে কী হবে?
নেপথ্যে। আমি জানতে চাই।
নন্দিনী। তুমি যখন জানবার কথা বল, কেমন ভয় করে।
নেপথ্যে। কেন।
নন্দিনী। মনে হয়, যে জিনিসটাকে মন দিয়ে জানা যায় না, প্রাণ দিয়ে বোঝা যায়, তার ’পরে তোমার দরদ নেই।
নেপথ্যে। তাকে বিশ্বাস করতে সাহস হয় না, পাছে ঠকি। যাও তুমি, সময় নষ্ট কোরো না। — না না, একটু রোসো। তোমার অলকের থেকে ঐ যে রক্তকরবীর গুচ্ছ গালের কাছে নেমে পড়েছে, আমাকে দাও।
নন্দিনী। এ নিয়ে কী হবে?
নেপথ্যে। ঐ ফুলের গুচ্ছ দেখি আর মনে হয়, ঐ যেন আমারই রক্ত-আলোর শনিগ্রহ ফুলের রূপ ধরে এসেছে। কখনো ইচ্ছে করছে, তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলি, আবার ভাবছি, নন্দিনী যদি কোনোদিন নিজের হাতে ঐ মঞ্জরি আমার মাথায় পরিয়ে দেয়, তা হলে –
নন্দিনী। তা হলে কী হবে?
নেপথ্যে। তা হলে হয়তো আমি সহজে মরতে পারব।
নন্দিনী। একজন মানুষ রক্তকরবী ভালোবাসে, আমি তাকে মনে করে ঐ ফুলে আমার কানের দুল করেছি।
নেপথ্যে। তা হলে বলে দিচ্ছি, ও আমারও শনিগ্রহ, তারও শনিগ্রহ।
নন্দিনী। ছি ছি, ওকি কথা বলছ! আমি যাই।
নেপথ্যে। কোথায় যাবে?
নন্দিনী। তোমার দুর্গদুয়ারের কাছে বসে থাকব।