রক্তকরবী
তার শেষও নেই। ঐ সোনার তালগুলো যে মদ, আমাদের যক্ষরাজের নিরেট মদ। বুঝতে পারলে না?

চন্দ্রা। না।

বিশু। মদের পেয়ালা নিয়ে ভুলে যাই ভাগ্যের গণ্ডির মধ্যে আমরা বাঁধা। মনে করি আমাদের অবাধ ছুটি। সোনার তাল হাতে নিয়ে এখানকার কর্তার সেই মোহ লাগে। সে ভাবে সর্বসাধারণের মাটির টান ওতে পৌঁছয় না, অসাধারণের আসমানে ও উড়ছে।

চন্দ্রা। নবান্নের সময় এল বলে গ্রামে গ্রামে তার জোগাড় চলছে। পায়ে পড়ি, ঘরে চলো। একবার সর্দারকে গিয়ে আমরা যদি—

বিশু। স্ত্রীবুদ্ধিতে সর্দারকে এখনো চেন নি বুঝি?

চন্দ্রা। কেন, ওকে দেখে তো আমার বেশ—

বিশু। হাঁ, বেশ ঝক্‌ঝকে। মকরের দাঁত, খাঁজে খাঁজে বড়ো পরিপাটি করে কামড়ে ধরে। মকররাজ স্বয়ং ইচ্ছে করলেও আলগা করতে পারে না।

চন্দ্রা। ঐ যে সর্দার।

বিশু। তবেই হয়েছে। আমাদের কথা নিশ্চয়ই শুনেছে।

চন্দ্রা। কেন, এমন তো কিছু বলি নি যাতে—

বিশু। বেয়ান, কথা আমরা বলি, মানে যে করে ওরা। কাজেই কোন্‌ কথার টিকে কোন্‌ চালে আগুন লাগায় কেউ জানে না।


সর্দারের প্রবেশ

চন্দ্রা। সর্দারদাদা!

সর্দার। কী নাতনি, খবর ভালো তো?

চন্দ্রা। একবার বাড়ি যেতে ছুটি দাও।

সর্দার। কেন। যে বাসা দিয়েছি সে তো খাসা, বাড়ির চেয়ে অনেক ভালো। সরকারি খরচে চৌকিদার পর্যন্ত রাখা গেছে। কী হে ৬৯ঙ, তোমাকে এদের মধ্যে দেখলে মনে হয় সারস এসেছেন বকের দলকে নাচ শেখাতে।

বিশু। সর্দারজি, তোমার ঠাট্টা শুনে আমোদ লাগছে না। নাচাবার মতো পায়ের জোর থাকলে এখান থেকে টেনে দৌড় মারতুম। তোমাদের এলাকায় নাচানো ব্যাবসা কত সাংঘাতিক তার মোটা মোটা দৃষ্টান্ত দেখেছি, এমন হয়েছে সাদা চালে চলতেও পা কাঁপে।

সর্দার। নাতনি, একটা সুখবর আছে। এদের ভালো কথা শোনাবার জন্যে কেনারাম গোঁসাইকে আনিয়ে রেখেছি। এদের কাছ থেকে প্রণামী আদায় করে খরচটা উঠে যাবে। গোঁসাইজির কাছ থেকে রোজ সন্ধেবেলায় এরা—

ফাগুলাল। না না, সে হবে না সর্দারজি। এখন সন্ধেবেলায় মদ খেয়ে বড়ো জোর মাতলামি করি, উপদেশ শোনাতে এলে নরহত্যা ঘটবে।

বিশু। চুপ চুপ, ফাগুলাল।

গোঁসাইয়ের প্রবেশ

সর্দার। এই যে বলতে বলতেই উপস্থিত। প্রভু, প্রণাম। আমাদের এই কারিগরদের দুর্বল মন, মাঝে মাঝে অশান্ত হয়ে ওঠে। এদের কানে একটু শান্তিমন্ত্র দেবেন— ভারি দরকার।