প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
“এমন অন্যায় অপবাদ দেবেন না। ও আমার বরকন্দাজ, রামশরণ।”
অচিরা মুখের উপর খয়েরি রঙের আঁচল টেনে নিয়ে খিল্খিল্ করে হেসে উঠল। হাসি থামতে চায় না। কী মিষ্টি তার ধ্বনি। যেন ঝর্নার নীচে নুড়িগুলো ঠুন্ঠুন্ করে উঠল সুরে সুরে। হাসি-অবসানে সে বলল, “কিন্তু সত্যি হলে খুব মজা হত।”
“মজা কার পক্ষে? ”
“যাকে নিয়ে ডাকাতি।”
“আর উদ্ধারকর্তার? ”
“বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাকে এক পেয়ালা চা খাইয়ে দিতুম আর গোটা দুয়েক স্বদেশী বিস্কুট।”
“আর এই ফাঁকি উদ্ধারকর্তার কী হবে।”
“যেরকম শোনা গেল তাঁর তো আর-কিছুতে দরকার নেই, কেবল প্রথম কথাটা।”
“ঐ প্রথম পদক্ষেপেই গণিতের অগ্রগতিটা কি বন্ধ হবে।”
“কেন হবে। ওকে চালাবার জন্যে বরকন্দাজের সাহায্য দরকার হবে না।”
বসলুম সেখানেই ঘাসের উপরে। একটা কাটা গাছের গুঁড়ির উপরে বসে ছিল অচিরা।
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, “আপনি হলে আমাকে প্রথম কথাটা কী বলতেন।”
“বলতুম, রাস্তায় ঘাটে ঢেলা কুড়িয়ে কুড়িয়ে করছেন কী। আপনার কি বয়স হয় নি।”
“বলেন নি কেন।”
“ভয় করেছিল।”
“আমাকে ভয় কিসের? ”
“আপনি যে মস্ত লোক, দাদুর কাছে শুনেছি। তিনি আপনার লেখা প্রবন্ধ বিলিতি কাগজে পড়েছেন। তিনি যা পড়েন আমাকে শোনাতে চেষ্টা করেন।”
“এটাও কি করেছিলেন।”
“নিষ্ঠুর তিনি, করেছিলেন। লাটিন শব্দের ভিড় দেখে জোড়হাত করে তাঁকে বলেছিলুম, দাদু এটা থাক্। বরঞ্চ তোমার সেই কোয়ান্টম থিয়োরির বইখানা খোলো।”
“সে থিয়োরিটা বুঝি আপনার জানা আছে? ”
“কিছুমাত্র না। কিন্তু দাদুর দৃঢ় বিশ্বাস সবাই সব-কিছু বুঝতে পারে। আর তাঁর অদ্ভুত এই একটা ধারণা যে, মেয়েদের বুদ্ধি পুরুষদের বুদ্ধির চেয়ে বেশি তীক্ষ্ম। তাই ভয়ে ভয়ে আছি অবিলম্বে আমাকে ‘টাইম-স্পেস’-এর জোড়মিলনের ব্যাখ্যা শুনতে হবে। দিদিমা যখন বেঁচে ছিলেন, দাদু বড়ো বড়ো কথা পাড়লেই তিনি মুখ বদ্ধ করে দিতেন; এটাই যে মেয়েদের বুদ্ধির প্রমাণ, দাদু কিন্তু সেটা বোঝেন নি।”
অচিরার দুই চোখ স্নেহে আর কৌতুকে ছল্ছল্ জ্বল্জ্বল্ করে উঠল।
দিনের আলো নিঃশেষ হয়ে এল। সন্ধ্যার প্রথম তারা জ্বলে উঠেছে একটা একলা তালগাছের মাথার উপরে। সাঁওতাল মেয়েরা ঘরে চলেছে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে, দূর থেকে শোনা যাচ্ছে তাদের গান।
এমন সময়ে বাইরে থেকে ডাক এল, “কোথায় তুমি। অন্ধকার হয়ে এল যে! আজকাল সময় ভালো নয়।”