প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
আয়া উঠল গুমরিয়ে, বললে, “সেদিন নেই, এখন লুঠ চলছে দু হাতে।”
“সত্যি নাকি।”
“আমি কি মিথ্যা বলছি। কলকাতার নতুন বাজারে ক’টা ফুলই বা পৌঁছয়। জামাইবাবু বেরিয়ে গেলেই খিড়কির দরজায় মালীদের ফুলের বাজার বসে যায়।”
“এরা কেউ দেখে না?”
“দেখবার গরজ এত কার।”
“জামাইবাবুকে বলিস নে কেন।”
“আমি বলবার কে। মান বাঁচিয়ে চলতে হবে তো? তুমি বল না কেন। তোমারই তো সব।”
“হোক-না, হোক-না, বেশ তো। চলুক-না এমনই কিছুদিন, তার পরে যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনি পড়বে ধরা। একদিন বোঝবার সময় আসবে, মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। চুপ করে থাক্ না।”
“কিন্তু তাও বলি খোঁখী, তোমার ওই হলা মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া যায় না।”
হলার কাজে ঔদাসীন্যই যে আয়ার একমাত্র বিরক্তির কারণ তা নয়, ওর উপরে নীরজার স্নেহ অসংগতরূপে বেড়ে উঠছে এই কারণটাই সব চেয়ে গুরুতর।
নীরজা বললে, “মালীকে দোষ দিই নে। নতুন মনিবকে সইতে পারবে কেন। ওদের হল সাতপুরুষে মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড়া বিদ্যে, হুকুম করতে এলে সে কি মানায়। হলা ছিষ্টিছাড়া আইন মানতে চায় না, আমার কাছে এসে নালিশ করে। আমি বলি কানে আনিস নে কথা, চুপ করে থাক্।”
“সেদিন জামাইবাবু ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিল।”
“কেন, কী জন্যে।”
“ও বসে বসে বিড়ি টানছে, আর ওর সামনে বাইরের গোরু এসে গাছ খাচ্ছে। জামাইবাবু বললে, ‘গোরু তাড়াস নে কেন।’ ও মুখের উপর জবাব করলে, ‘আমি তাড়াব গোরু! গোরুই তো তাড়া করে আমাকে। আমার প্রাণের ভয় নেই!’ ”
শুনে হাসলে নীরজা, বললে, “ওর ঐরকম কথা। তা যাই হোক, ও আমার আপন হাতে তৈরী।”
“জামাইবাবু তোমার খাতিরেই তো ওকে সয়ে যায়, তা গোরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। এতটা আবদার ভালো নয়, তাও বলি।”
“চুপ কর রোশনি। কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি সে কি আমি বুঝি নে। ওর আগুন জ্বলছে বুকে। ঐ যে হলা মাথায় গামছা দিয়ে কোথায় চলেছে। ডাক্ তো ওকে।”
আয়ার ডাকে হলধর মালী এল ঘরে। নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “কী রে, আজকাল নতুন ফরমাশ কিছু আছে?”
হলা বললে, “আছে বৈকি। শুনে হাসিও পায়, চোখে জলও আসে।”
“কী রকম, শুনি।”
“ঐ-যে সামনে মল্লিকদের পুরোনো বাড়ি ভাঙা হচ্ছে ঐখান থেকে ইটপাটকেল নিয়ে এসে গাছের তলায় বিছিয়ে দিতে হবে। এই হল ওঁর হুকুম। আমি বললুম, রোদের বেলায় গরম লাগবে গাছের। কান দেয় না আমার কথায়।”
“বাবুকে বলিস নে কেন।”
“বাবুকে বলেছিলেম। বাবু ধমক দিয়ে বলে, চুপ করে থাক্। বউদিদি, ছুটি দাও আমাকে, সহ্য হয় না আমার।”