প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
জনক রাজার উপরি-উক্ত উক্তি লইয়া একটা তর্ক উপস্থিত হইল, নিম্নে তাহা প্রকাশ করিলাম।
আমি। যাহা কিছু আমি দেখিতে পাই, সকলি আমার।
তুমি। সে কিরকম কথা?
আমি। নহে তো কি? যে গুণে তুমি একটা পদার্থকে আমার বলো, সে গুণটি কি?
তুমি। অন্য সকলে যে পদার্থকে উপভোগ করিতে পায় না, অথবা আংশিক ভাবে পায়, আমিই কেবল যাহাকে সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পাই, তাহাই আমার।
আমি। পৃথিবীতে এমন কি পদার্থ আছে, যাহাকে আমরা সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পারি? কোন্টার ঘ্রাণ, কোন্টার শব্দ, কোন্টার স্বাদ, কোন্টার দৃশ্য, কোন্টার স্পর্শ আমরা ভোগ করি, অথবা একাধারে ইহাদের দুই-তিনটাও ভোগ করিতে পারি। কিংবা হয়ত ইহাদের সকলগুলিকেই এক পদার্থের মধ্যে পাইলাম, কিন্তু তবু তাহাকে সর্বতোভাবে উপভোগ করিতে পারি কই? জগতে আমরা কিছুই সর্বতোভাবে জানি না, একটি তৃণকেও না— তবে সর্বতোভাবে ভোগ করিব কি করিয়া? কে বলিতে পারে আমাদের যদি আর একটি ইন্দ্রিয় থাকিত তবে এই তৃণটির মধ্যে দৃষ্টি স্বাদ গন্ধ স্পর্শ প্রভৃতি ব্যতীতও আরো অনেক উপভোগ্য গুণ দেখিতে না পাইতাম?
তুমি। তুমি অত সূক্ষ্মে গেলে চলিবে কেন? “সর্বতোভাবে উপভোগ করা”র অর্থ এই যে, মানুষের পক্ষে যত দূর সম্ভব তত দূর উপভোগ করা।
আমি। এ স্থলে তুমি উপভোগ শব্দ ব্যবহার করিয়া অতিশয় ভ্রমাত্মক কথা কহিতেছ। প্রচলিত ভাষায় স্বত্ব থাকা, উপভোগ করা, উভয়ের এক অর্থ নহে। মনে কর একজন হতভাগ্য নিজে ভাঙা ঘরে কুশ্রী পদার্থের মধ্যে বাস করে ও গৌরাঙ্গ প্রভুদের জন্য একটি অট্টালিকা ভালো ভালো ছবি, রঙীন কার্পেট ও ঝাড়-লণ্ঠন দিয়া সুসজ্জিত করিয়া রাখিয়াছে— সে অট্টালিকা, সে ছবি, সে উপভোগ করে না বলিয়াই কি তাহা তাহার নহে?
তুমি। উপভোগ করে না বটে, কিন্তু ইচ্ছা করিলেই করিতে পারে।
আমি। সে কথা নিতান্তই ভুল, যদি সে কোন অবস্থায় ছবি উপভোগ করিতে পারিত তবে তাহা নিজের ঘরেই টাঙাইত। মূর্খ একটি বই কিনিয়া কোন মতেই তাহা বুঝিতে না পারুক, তথাপি সে বইটিকে আপনার বলিতে সে ছাড়িবে না।
তুমি। আচ্ছা, উপভোগ করা চুলায় যাউক। যে বস্তুর উপর সর্বসাধারণের অপেক্ষা তোমার অধিক ক্ষমতা খাটে, যে বইটিকে তুমি ইচ্ছা করিলে অবাধে পোড়াইতে পার, রাখিতে পার, দান করিতে পার, অন্যের হাত হইতে কাড়িয়া লইতে পার, তাহাতেই তোমার অধিকার আছে।