পরিশিষ্ট
মদনমোহন মালব্য
বন্ধু সর্বজনবন্ধু,

ভারতবর্ষ যে দেবতাকে বলেছেন, এষ দেবো বিশ্বকর্মা মহাত্মা, সদা জনানাং হৃদয়বাসী পরম দেবতার উপাসনায় তুমি আজ পৌরোহিত্য পদ গ্রহন করেছ, আমি তোমাকে অভিবাদন করি।

তুমি ব্রাহ্মন, সর্ববর্ণকে সম্মানিত করবার উদার অধিকার তোমার, সেই অধিকারকে তুমি অশঙ্কচিত্ত অধ্যবসায়ে স্বীকার করেছ, ভারতে ব্রাহ্মণকে ধন্য করেছ, ব্রাহ্মণকে সত্য করেছ, তোমাকে অভিবাদন করি।

আমাদের ধর্মশাস্ত্রে আছে

“সুখং হবমতঃ শেতে মুখঞ্চ প্রতিবুধ্যতে

সুখং চরতি লোকে, স্মিন্নবমন্তা বিনশ্যতি।”

ভারতে আমরা দীর্ঘকাল মানুষকে অপমানিত করেছি। তাকে হীন করে রেখেছি, সেই পাপে আমরা বিনাশের পথে চলেছিলুম, সেই পাপ মোচন করে বিনাশের থেকে দেশকে রক্ষা করবার চেষ্টায় তুমি প্রবৃত্ত, তোমাকে আমি অভিবাদন করি।

সংসারে পাণ্ডিত্য দুর্লভ নয় যে পাণ্ডিত্য আক্ষরিক। তুমি ভারতের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাকে আত্মায় গ্রহণ করেছ, সেই বিদ্যার প্রভাবে দেশকে মোহমুক্ত করবার জন্য তোমার উদ্যম, সেই বিদ্যাকে তুমি মানব ইতিহাসে ফলশস্যশালী করে তুলবে, তোমাকে অভিবাদন করি।

দেশে একদা শিক্ষার ক্ষেত্র তুমি প্রসারিত করেছ, আজ তুমি ভারতে স্বরাষ্ট্রের পথকে প্রশস্ত করবার জন্য তোমার অসম্মান শক্তিকে নিযুক্ত করেছ। রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা তোমার চেষ্টার সমর্থন না করাতেও পারে, কিন্তু যে সাধনা মহতী ব্যর্থ হলেও তা দেশের লোকের পক্ষে চিরসম্পদ, সেই সম্পদ থেকে কোনো প্রতিকূলতা দেশকে বঞ্চিত করতে পারবে না। তোমাকে আমি অভিবাদন করি।

সমস্ত ভারতবর্ষের নামে এখানে আমরা তপস্যাক্ষেত্র রচনা করেছি। দেশের চিত্তকে স্বকৃত ও পরকৃত সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত করব, এই আমাদের সংকল্প। আমাদের স্বল্প শক্তিতে এই সংকল্প সমস্ত বিরুদ্ধতা অতিক্রম করে সম্পূর্ণ সিদ্ধিলাভ করবে কি না জানি না। কিন্তু দুঃসাধ্যতার ভয়ে চেষ্টামাত্র না করলে যে আত্মলাঘব ঘটত, তার থেকে উদ্ধার পাবার জন্য দীর্ঘকাল সকল প্রকার আঘাত-ব্যাঘাত, বিদ্রূপ ও বিমুখতার সঙ্গে সংগ্রাম করে এসেছি। হে কৃতী হে যশস্বী আজ আমাদের সেই সাধনার ক্ষেত্র তোমার প্রসন্ন আগমনের দ্বারা সার্থক হল, তোমাকে আমি অভিবাদন করি।

 

 

পোরে দেবৌদ
হে পারস্য সভ্যতার বার্তাবহ, আমরা আপনাকে শান্তিনিকেতন তথা ভারতের পক্ষ হইতে অভিনন্দিত করি। ভারতবর্ষ শিল্পকলা, সাহিত্য, দর্শনের ভিতর দিয়া আপনাদের সহিত মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ। ভাষা ও ব্যবধানের দূরত্ব সত্ত্বেও এশিয়ার আত্মপ্রকাশের দিন আপনাদের সহিত একসূত্রে ভারত তাহার চিন্তাধারা ও আত্মানুভূতির সামঞ্জস্য রাখিয়া চলিয়াছিল।