পরিশিষ্ট
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
বর্তমান বৎসরে মহাত্মাজীর জন্মদিবসে সমগ্র দেশের সহিত আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা তাঁহাকে জ্ঞাপন করিতেছি। সেইসঙ্গে এ বৎসর তাঁহার আদর্শে ও অনুপ্রেরণায় পল্লীশিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য যে বিরাট প্রচেষ্টার উদ্‌বোধন করা হইয়াছে, তাহাও আমি স্মরণ করিব। কারণ, ভারতের জাতীয়তার পুনর্গঠনে ইহার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি।

 

 

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
আজিকার প্রধান সমস্যা হইল এই যে, জাতীয় ঐক্যের আবহাওয়া সৃষ্টি হইলেও আমরা এখনো এক হইতে পারি নাই। সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা এবং সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় সংহতির মূলে কুঠারঘাত করিতেছে; গান্ধীজীর রাজনীতির মূল লক্ষ্য হইল ঐক্য স্থাপন, সেই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের অস্ত্রস্বরূপ নয়— উহা দুর্বার নৈতিক শক্তিও বটে। তিনিই সর্বপ্রথম রাজনীতিকে ধর্মের অঙ্গীভূত করিয়াছেন। তিনি পাশ্চাত্য রাজনৈতিক আন্দোলনসমূহের গোড়ার খবর রাখেন; কাজেই তিনি বুঝিতে পারিয়াছেন, একমাত্র সাফল্যের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া মহত্তর কিছুর অভাববশত পাশ্চাত্য রাজনীতির অন্তঃস্থল গলদে পরিপূর্ণ। পাশ্চাত্য রাজনীতির পাঠশালায় শিক্ষাপ্রাপ্ত এমন অনেক রাজনৈতিক নেতা আজও আমাদের মধ্যে আছেন। ইঁহাদের নিকট সাফল্যের স্থান সত্যেরও ঊর্ধ্বে তাঁহাদের যে তথাকথিত যোগ্যতা আছে তাহা আমরা স্বীকার করিতে পারি, কিন্তু আমরা তাঁহাদিগকে ভক্তি করিতে পারি না। আত্মসর্বস্ব পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের নিষ্ঠুরতা প্রলয়ংকর বিপদের দিকে চলিয়াছে। পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদের বিষময় ফল দিনের পর দিন প্রকট হইয়া উঠিতেছে। পন্থা নির্বাচনের পূর্বে আমাদের তাহা ভাবিয়া দেখা উচিত। খৃষ্টধর্ম শিক্ষা দেয়, সত্যই পরমেশ্বর। কিন্তু বর্তমান যুগের খৃষ্টানেরা তৎপরিবর্তে পাশবিক শক্তির গৌরব ঘোষণা করে। আধুনিক যুগের একমাত্র খাঁটি খৃষ্টান কাউন্ট টলস্টয় গান্ধীজীকে দেখাইয়াছেন, রাজনীতির ক্ষেত্রেও নৈতিক শক্তি কিরূপ কার্যকর। স্বদেশপ্রীতির বুলি বর্তমান যুগের অভিশাপ সত্য ও অহিংসা দ্বারা মহাত্মা গান্ধী আমাদিগকে ওই বিপদ হইতে উদ্ধারের চেষ্টা করিয়াছেন। উহাই তাঁহার সাধনা এবং মাতৃভূমির মারফত জগতের প্রতি উহাই তাঁহার শ্রেষ্ঠতম দান। ভারতের ইতিহাসে এই স্মরণীয় দিনে আমরা তাঁহার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও প্রেমাঞ্জলি অর্পণ করিতেছি।