প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
আজিকার শতবার্ষিকী উৎসবে আমরা যেন এই মহাপুরুষের বহুমুখী প্রতিভা এবং বহুমুখী সাধনার মর্ম উপলব্ধি করি এবং আমাদের সমসাময়িক মানবজাতির মধ্যে প্রচার করি। রামমোহন তাঁহার যুগে নির্যাতিত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার নির্যাতন হইতেই আধুনিক যুগে তাঁহার মৃত্যুহীন প্রভাব মঙ্গলময় প্রচেষ্টায় পরিব্যাপ্ত হইয়াছে। আজ এই জাতিগঠনের যুগেও যদি আমরা তাঁহার আদর্শ উপেক্ষা করিয়া — যে-সকল প্রথা ও সংস্কার মানুষকে মানুষ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিয়াছে, সেই-সকল প্রথা ও সংস্কার যদি আমরা সবলে উচ্ছেদ না করি, তবে ইতিহাসে চিরকাল আমরা নিন্দাভাজন হইয়া থাকিব; আমাদের অক্ষমতাই রামমোহনের মহত্ত্বের মাপকাঠি হইবে।
আজ পর্যন্ত ভারতে অমিল ও অনৈক্যের দৃষ্টান্ত বর্তমান। ইহা ভারতের দুর্ভাগ্যেরই পরিচায়ক। ভবিষ্যদ্রষ্টার দূরদৃষ্টিসহকারে তিনি তাঁহার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব লইয়া সজোরে এই-সকল কুসংস্কার প্রভৃতির মূলে আঘাত করিয়াছিলেন এবং হিন্দু, মুসলমান ও খৃস্টানগণের সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাহদিগের মধ্যে সমন্বয়ের পথনির্দেশ করিয়াছিলেন।
রামমোহন রায় ভারতের নবযুগের প্রবর্তক। যে-সকল ঋষি যুগ যুগ ধরিয়া ভারতকে নব প্রেরণা ও বল জোগাইয়াছেন, তিনি তাঁহাদের মধ্যে অন্যতম, কুসংস্কারের অন্ধ তমসা দূরীকরণে তিনি আপন শক্তি নিয়োজিত করেন। তিনি শুধু মানবে মানবে নহে, জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাসবান ছিলেন এবং এই বোধই তাঁহাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে মৈত্রীসাধনে সচেষ্ট করিয়াছিল।
বর্তমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রামমোহন রায়কে নমস্কার।