প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
বঙ্গদেশের প্রাচীন লোকেরা সভয়ে দেখিতেছেন যে, নূতন বংশের অভ্যুত্থানশীল যুবকদের মধ্যে অতিশয় বিপ্লব চলিতেছে। তাঁহারা ভাবিতেছেন, কলির সন্ধ্যাকাল বুঝি উপস্থিত হইয়াছে; কেহ কাহাকে মানে না, সকলে স্ব স্ব প্রধান, স্বদেশ-সম্বন্ধে অভিজ্ঞ বৃদ্ধদের কাছে তহারা পরামর্শ চায় না, বিদেশের সর্ববিদ্যাভিমানী গ্রন্থকারের কথাই তাহাদের বেদবাক্য, প্রাচীন প্রথার অনুসরণ করিতে নিতান্ত বিমুখ, এবং ভালোই হউক আর মন্দই হউক তাহা লঙঘন করিতে পারিলে আপনাকে মহাবীর বলিয়া মনে করে, সকলেই মনে করে, আমারই উপর বিধাতা এই অসভ্য বঙ্গদেশের সংস্কারের ভার অর্পন করিয়াছেন, আমার কথাতেই সকলে চলিবে, আমি কাহারো কথায় চলিব না, এবং যাঁহারা একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেন বা তথা হইতে নির্গত হন, তাঁহারা দেশের লোকের রুচির, জ্ঞানের, সভ্যতার দোষ ধরিয়া বেড়ান, তাঁহারা মনে করেন সকল বিষয়েই আমার অধিকার আছে, এইজন্য তিনি বুঝুন বা না বুঝুন সকল কথা লইয়াই তোলাপাড়া করিয়া থাকেন। যাহা হউক, আমাদের এই নব্য বংশ এখনও বৃদ্ধদের শাসনে আছেন, কিন্তু যখন এই প্রাচীন বংশ লোপ পাইবেক, তখন এই যথেচ্ছাচারী শত শত শিক্ষিত লোক কী গোলযোগ বাধাইবেন কে বলিতে পারে। এই-সকল ভাবিয়া অনেক ভয় পাইতেও পারেন, কিন্তু আমরা বলি এ বিপ্লব চিরকাল থাকিবে না। নিদ্রোন্মীলিত নয়নে নূতন জ্ঞানের আলোক লাগিয়া বঙ্গবাসীরা অন্ধ হইয়া গিয়াছেন, তাঁহারা দিগ্বিদিক্- শূন্য হইয়া কী করিবেন ভাবিয়া পাইতেছেন না। যখন এই আলোক তাঁহাদের চক্ষে সহিয়া যাইবে, তখন আবার তাঁহারা চারি দিক স্পষ্টতর দেখিতে পাইবেন এবং দেশ-কাল-পাত্র বুঝিয়া কর্তব্যাকর্তব্য নির্ধারিত করিতে পারিবেন। তাঁহারা পারিবারিক সুখের বন্ধন ছিঁড়িয়া ফেলাকেই স্বাতন্ত্র্য মনে করেন, যথেচ্ছারিতাকেই স্বাধীনতা বলিয়া আলিঙ্গন করেন ও স্বদেশকে ঘৃণা করাকেই সার্বভৌমিক ভাব মনে করেন। এ অবস্থা