পিত্রার্কা ও লরা
আমরা লরার একটি মহান মূর্তি দেখিতে পাই–ভালোবাসিয়াছেন অথচ প্রকাশ করেন নাই–পিত্রার্কার প্রেমে কিছুমাত্র উৎসাহ দেন নাই–বরং তাঁহার প্রেমের স্রোত ফিরাইতেই চেষ্টা করিয়াছিলেন–প্রেম তাঁহাকে তাঁহার কর্তব্যপথ হইতে কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারে নাই, বরং বোধ হয় তাঁহাকে কর্তব্যপথে অধিকতর নিয়োজিত করিয়াছিল।

জন-কোলাহল হইতে দূর থাকিবার জন্য পিত্রার্কা ভোক্লুসের উপত্যকায় আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। এই উপত্যকার দৃশ্য অতিশয় সুন্দর। এখানকার মোহিনী বিজনতার মধ্যে থাকিয়া, পিত্রর্কার হৃদয় হইতে যে প্রথম কবিতা উৎসারিত হয় তাহা লরার উদ্দেশ্যে প্রেম-গীতি। প্রকৃতির প্রতি সৌন্দর্যের মধ্যে তিনি যেন লরার সত্তা অনুভব করিতেন।

প্রতি উচ্চ-শাখাময় সরল কানন

প্রতি স্নিগ্ধ ছায়া মোর ভ্রমণের স্থান;

শৈলে শৈলে তাঁর সেই পবিত্র-আনন

দেখিবারে পায় মোর মানস-নয়ন।

সহসা ভাবনা হতে উঠি যবে জাগি,

প্রেমে মগ্ন মন মোর বলে গো আমায়

‘কোথায় ভ্রমিছ ওগো, ভ্রমিছ কী লাগি?

কোথা হতে আসিয়াছ, এসেছ কোথায়?’

হৃদে মোর এইসব চঞ্চল-স্বপন

ক্রমে ক্রমে স্থির চিন্তা করে আনয়ন,

আপনারে একেবারে যাই যেন ভুলি

দহে গো আমারে শুধু তারি চিন্তাগুলি।

মনে হয় প্রিয়া যেন আসিয়াছে কাছে

সে ভুলে উজলি উঠে নয়ন আমার,

চারি দিকে লরা যেন দাঁড়াইয়া আছে

এ স্বপ্ন না ভাঙে যদি কী চাহি গো আর?

দেখি যেন (কেবা তাহা করিবে বিশ্বাস?)

বিমল সলিল কিংবা হরিত কানন

অথবা তুষার-শুভ্র উষার আকাশ

তাঁহারি জীবন্ত-ছবি করিছে বহন!

            ...

দুর্গম-সংসারে যত করি গো ভ্রমণ,

ঘোরতর মরু মাঝে যতদূর যাই,

কল্পনা ততই তার মুরতি মোহন

দিশে দিশে আঁকে, যেন দেখিবারে পাই।

অবশেষে আসে ধীরে সত্য সুকঠোর