বিয়াত্রিচে, দান্তে ও তাঁহার কাব্য

ঈশ্বর নূতন সৃষ্টি করিলা সৃজন!

মুকুতার মতো পাণ্ডু বরন তাহার–

প্রকৃতির পূর্ণতম-শিল্প সেই জন,

কহি তারে পূর্ণতম আদর্শ শোভার!

সুন্দর নয়নে তার সদাই জাগ্রত

এমন প্রেমের জ্যোতি, এমন উজ্জ্বল

যে জ্যোতি দর্শক আঁখি করায় মুদিত-

সে জ্যোতি ঢালয়ে হৃদে আলোক বিমল।

হাসিতে চিত্রিত যেন প্রেমের আকার-

এক দৃষ্টে কে তাকাবে সে হাসি তাহার?

তোমারে কহি, হে গান, সন্তান প্রেমের,

তুমি তো যাইবে বহু মহিলার কাছে,

বিলম্ব কোরো না কভু, বলো তাঁহাদের-

‘দেবীগণ, মোর শুধু এক কাজ আছে-

তাঁহার চরণে যাওয়া, যাঁর মহা যশে

ভাণ্ডার আমার এই পূর্ণ রহিয়াছে।’

যদিবা বিলম্ব তব হয় দৈববশে,

দেখো যেন রহিয়ো না তাহাদের কাছে-

অসাধু যাদের জান, মন ভালো নয়-

কেবল রমণী আর প্রেমিকের কানে

খুলিয়া হে গীত তুমি তোমার হৃদয়!

মহিলা আমার বসি আছেন সেখানে [যেখানে,]

সেখানে তোমারে তাঁরা যাবেন লইয়া-

তাঁরে মোর কথা তুমি দিয়ো বুঝাইয়া!

একবার দান্তে অত্যন্ত পীড়িত হন, পীড়ার সময় সহসা কেমন তাঁহার মনে হইল, বিয়াত্রিচের মৃত্যু হইবে! কল্পনা তাঁহাকে পাগলের মতো করিয়া তুলিল, কল্পনায় তিনি দেখিতে লাগিলেন, কেহ তাঁহাকে কহিতেছে, ‘তোমার মৃত্যু হইবে।’ কেহ বা কহিতেছে, ‘তুমি মরিয়াছ।’ তিনি দেখিলেন যেন সূর্য অন্ধকার, তারকারা রোদন করিতেছে, ভয়ানক ভূমিকম্প হইতেছে, তাঁহার চারি দিকে পাখিরা মরিতেছে ও পড়িতেছে–এই বিপ্লবের মধ্যে কে যেন তাঁহাকে কহিল, ‘জান না তোমার অনুপম মহিলা পৃথিবী পরিত্যাগ করিয়াছেন?’ তিনি যেন বিয়াত্রিচের মৃত্যুকালীন প্রশান্ত মুখ দেখিতে পাইলেন। সেই অজ্ঞান অবস্থায় এমন কাতর স্বরে মৃত্যুকে আহ্বান করিলেন যে, শয্যাপার্শ্বস্থ শুভ্রূষাকারিণী রমণী ভয়ে কাঁদিতে লাগিলেন। অবশেষে জাগ্রত হইয়া ইহা স্বপ্ন জানিতে পারিয়া সুস্থির হইলেন।