মেঘনাদবধ কাব্য

কুলবধূ; বিহঙ্গম কাঁপিল কুলায়ে;

পর্বত গহ্বরে সিংহ; বনহস্তী বনে;

ডুবিল অতল জলে জলচর যত।

সুন্দর হইয়াছে। পশ্চিম দুয়ারে যাইতেই হনু গর্জিয়া উঠিল। অমনি ‘নৃমুণ্ড মালিনী সখি (উগ্রচণ্ডাধনী) ’ রোষে হুংকারিয়া সীতানাথকে সংবাদ দিতে কহিলেন। হনুমান অগ্রসর হইয়া সভয়ে প্রমীলাকে দেখিল, এবং মনে মনে কহিল–

অলঙ্ঘ্য সাগর লঙ্ঘি, উতরিনু যবে

লঙ্কাপুরে, ভয়ংকরী হেরিনু ভীমারে,

প্রচণ্ডা খর্পর খণ্ডা হাতে মুণ্ডমালী।

দানব নন্দিনী যত মন্দোদরী আদি

রাবণের প্রণয়িনী, দেখিনু তা সবে।

রক্ষঃ-কুল-বালা-দলে, রক্ষঃ কুল-বধূ

(শশিকলা সমরূপে) ঘোর নিশাকালে,

দেখিনু সকলে একা ফিরি ঘরে ঘরে।

দেখিনু অশোক বনে (হায় শোকাকুলা)

রঘুকুল কমলেরে,–কিন্তু নাহি হেরি

এ হেন রূপ-মাধুরী কভু এ ভুবনে।

ভয়ংকরী ভীমা প্রচণ্ড খর্পর খণ্ডা হাতে মুণ্ডমালী এবং রক্ষঃকুলবালাদল শশিকলাসমরূপে, অশোক বনে শোকাকুল রঘুকুলকমল, পাশাপাশি বসিতে পারে না। কবির যদি প্রমীলাকে ভয়ংকরী করিবার অভিপ্রায় ছিল, তবে শশিকলাসম রূপবতী রক্ষঃকুলবালা এবং রঘুকুলকমলকে ত্যাগ করিলেই ভালো হইত। কিংবা যদি তাঁহাকে রূপমাধুরী-সম্পন্না করিবার ইচ্ছা ছিল তবে খর্পর খণ্ডা হস্তে মুণ্ডমালীকে পরিত্যাগ করাই উচিত ছিল।

প্রমীলা রামের নিকট নৃমুণ্ডমালিনী-আকৃতি নৃমুণ্ডমালিনীকে দূতী স্বরূপে প্রেরণ করিলেন,

চমকিলা বীরবৃন্দ হেরিয়া বামারে,

চমকে গৃহস্থ যথা ঘোর নিশাকালে

হেরি অগ্নিশিখা ঘরে! হাসিলা ভামিনী

মনে মনে। এক দৃষ্টে চাহে বীর যত

দড়ে রড়ে জড় সবে হয়ে স্থানে স্থানে।

বাজিল নূপুর পায়ে কাঞ্চি কটিদেশে।

ভীমাকার শূল করে, চলে নিতম্বিনী

জরজরি সর্ব জনে কটাক্ষের শরে

তীক্ষ্মতর।

আমরা ভয়ে জড়সড় হইব, না কটাক্ষে জর-জর হইব এই এক সমস্যায় পড়িলাম।

নব মাতঙ্গিনী গতি চলিলা রঙ্গিণী,

আলো করি দশদিশ, কৌমুদী যেমতি,