প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি
আর জানি কার হয়!
যুবতী হইয়া শ্যাম ভাঙ্গাইয়া
এমতি করিল কে?
আমার পরাণ যেমতি করিছে
সেমতি হউক সে!
“আমার পরাণ যেমতি করিছে তেমতি হউক সে! “ এই কথাটার মধ্যে কতটা কথা আছে! রাধা সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে আর অভিশাপ খুঁজিয়া পাইল না। শত সহস্র অভিশাপের পরিবর্ত্তে সে কেবল একটি কথা কহিল। সে কহিল, “ আমার পরাণ যেমন করিছে, তেমনি হউক সে! “ ইহাতেই বুঝিতে পারিয়াছি রাধার পরাণ কেমন করিতেছে! ঐ এক “যেমন করিছে” শব্দের মধ্যে নিদারুণ কষ্ট প্রচ্ছন্ন আছে, সে কষ্ট বর্ণনা না করিলে যতটা বর্ণিত হয় এমন আর কিছুতে না। উপরি-উক্ত পদটির মধ্যে রাধা দুই বার অভিশাপ দিতে গিয়াছে, কিন্তু উহার অপেক্ষা গুরুতর অভিশাপ সে আর কোনমতে খুঁজিয়া পাইল না। ইহাতেই রাধার সমস্ত হৃদয় দেখিতে পাইলাম।
বিদ্যাপতি সুখের কবি,চণ্ডিদাস দুঃখের কবি। বিদ্যাপতি বিরহে কাতর হইয়া পড়েন, চণ্ডিদাসের মিলনেও সুখ নাই। বিদ্যাপতি জগতের মধ্যে প্রেমকে সার বলিয়া জানিয়াছেন, চণ্ডিদাস প্রেমকেই জগৎ বলিয়া জানিয়াছেন। বিদ্যাপতি ভোগ করিবার কবি, চণ্ডিদাস সহ্য করিবার কবি! চণ্ডিদাস সুখের মধ্যে দুঃখ ও দুঃখের মধ্যে সুখ দেখিতে পাইয়াছেন। তাঁহার সুখের মধ্যেও ভয় এবং দুঃখের প্রতিও অনুরাগ। বিদ্যাপতি কেবল জানেন যে মিলনে সুখ ও বিরহে দুঃখ, কিন্তু চণ্ডিদাসের হৃদয় আরো গভীর, তিনি উহা অপেক্ষা আরো অধিক জানেন! তাঁহার প্রেম “কিছু কিছু সুধা বিষগুণা আধা “, তাঁহার কাছে শ্যাম যে মুরলী বাজান তাহাও “বিষামৃতে একত্র করিয়া “। –
কহে চণ্ডিদাস, ‘ শুন বিনোদিনী,
সুখ দুখ দুটি ভাই?
সুখের লাগিয়া যে করে পিরীতি,
দুখ যায় তার ঠাঁই। '
চণ্ডিদাস শতবার করিয়া বলিয়াছেন –
যার যত জ্বালা তার ততই পিরীতি –
“সদা জ্বালা যার, তবে সে তাহার মিলয়ে পিরীতিধন।” “অধিক জ্বালা যায় তার অধিক পিরীতি।” ইত্যাদি। কিন্তু সেই চণ্ডিদাস আবার কহিয়াছেন –
সই, পিরীতি না জানে যারা,
এ তিন ভুবনে জনমে জনমে
কি সুখ জানয়ে তারা?
পিরীতি-নামক যে জ্বালা, পিরীতি-নামক যে দুঃখ, এ দুঃখ যাহারা না জানিয়াছে, তাহারা পৃথিবীতে কি সুখ পাইয়াছে? যখন রাধা কহিলেন –