ললাটের লিখন

“ আমাকে? নিতে সাহস আছে তোমার?”

“ আছে। ”

“ সেন্টিমেন্ট এক ফোঁটাও থাকবে না। ”

“ নেই রইল। ”

“ নির্জলা একাদশী, নিষ্ঠুর সত্য। ”

“ রাজি আছি। ”

“ আচ্ছা, রাজি? দেখো, নভেল লেখা নয়, সত্যিকার সংসার। ”

“ শিশু নই আমি, এ কথা বুঝি। ”

“ না মশায়, কিছু বোঝ না। বুঝতে হবে দিনে-দিনে পলে-পলে, বুঝতে হবে হাড়ে-হাড়ে। ”

“ সেই হবে আমার জীবনের সব চেয়ে বড়ো অভিজ্ঞতা। আমাকে ভয় দেখাতে পরবে না কিছুতেই। ”

“ সত্যি কথা বলি। এত দিন তোমাকে কাছে কাছেই দেখলুম, বুদ্ধি তোমার পাকে নি, তাই কেবলই ধার ক'রে ক'রে কাজ চালাও। মেয়েদের সম্বন্ধে বইপড়া কথা অনেক শুনেছি তোমার মুখে। একটা কথা শুনে রাখো, যারা অবুঝ তাদের উপর মেয়েদের খুব একটা টান আছে, যেমন মমতা রোগাদের 'পরে। ওদের ভার পেলে মেয়েদের বেকার দশা ঘোচে। তোমার উপর আমার সত্যিকার স্নেহ জন্মেছে। এতদিন তোমাকে বাঁচিয়ে এসেছি তোমার নিজের নির্বুদ্ধিতা আর বাইরের বিরুদ্ধতা থেকে। সেইজন্যে যে সর্বনেশে প্রস্তাব এইমাত্র করলে সেটাতে সম্মতি দিতে আমার দয়া হচ্ছে। ”

“ সম্মতি যদি না দাও তা হলে যে নির্দয়তা হবে তার তুলনা নেই। ”

“ মেলোড্রামা? ”

“ না, মেলোড্রামা নয়। ”

“ আজ না হোক কাল মেলোড্রামা হয়ে উঠবে না? ”

“ যদি কোনোদিন হয়ে ওঠে তবে ওই খাতার মতো দিনগুলোকে নিজের হাতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ো। ”

বাঁশরি উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “ আচ্ছা দিলেম সম্মতি। ”

পৃথ্বীশ ওর দিকে লাফ দিয়ে এল। বাঁশরি পিছু হঠে গিয়ে বললে, “ এখনি শুরু হল! এখনো ভালো করে ভেবে দেখো — পিছোবার সময় আছে। ”

পৃথ্বীশ হাত জোড় করে বললে, “ মাপ করো আমাকে। ভয় হচ্ছে পাছে তোমার মত বদলায়। ”

“ বদলাবে না। অমন করে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকো না। যাও রেজিস্ট্রারের আপিসে। যত শীঘ্র পার বিয়ে হওয়া চাই। নিমন্ত্রণের চিঠি ছাপতে দিয়ো আজই। ”

“ অনুষ্ঠান কিছু হবে না? ”

“ কিছু না, একেবারে নির্জলা একাদশী। ”

“ কাউকে নিমন্ত্রণ? ”

“ কাউকে না। ”

“ কাউকেই না? ”

“ আচ্ছা, সোমশংকরকে। আর-একটা কথা বলি, গল্পটার কপি নিশ্চয় আছে তোমার ডেস্কে, সেটা পুড়িয়ে ফেলো,