প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
স্বর্গের অধিকারে মানুষ বাধা পাবে না, এই তার পণ। তাই, কঠিন সন্ধানে অমর হবার মন্ত্র সে শিখে নিয়েছে। এখন একলা বনের মধ্যে সেই মন্ত্র সে সাধনা করে।
বনের ধারে ছিল এক কাঠকুড়নি মেয়ে। সে মাঝে মাঝে আঁচলে ক’রে তার জন্যে ফল নিয়ে আসে, আর পাতার পাত্রে আনে ঝরনার জল।
ক্রমে তপস্যা এত কঠোর হল যে, ফল সে আর ছোঁয় না, পাখিতে এসে ঠুকরে খেয়ে যায়।
আরো কিছু দিন গেল। তখন ঝরনার জল পাতার পাত্রেই শুকিয়ে যায়, মুখে ওঠে না।
কাঠকুড়নি মেয়ে বলে, “এখন আমি করব কী! আমার সেবা যে বৃথা হতে চলল।”
তার পর থেকে ফুল তুলে সে তপস্বীর পায়ের কাছে রেখে যায়, তপস্বী জানতেও পারে না।
মধ্যাহ্নে রোদ যখন প্রখর হয় সে আপন আঁচলটি তুলে ধ’রে ছায়া করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু, তপস্বীর কাছে রোদও যা ছায়াও তা।
কৃষ্ণপক্ষের রাতে অন্ধকার যখন ঘন হয় কাঠকুড়নি সেখানে জেগে বসে থাকে। তাপসের কোনো ভয়ের কারণ নেই, তবু সে পাহারা দেয়।
একদিন এমন ছিল যখন এই কাঠকুড়নির সঙ্গে দেখা হলে নবীন তপস্বী স্নেহ করে জিজ্ঞাসা করত, “কেমন আছ।”
কাঠকুড়নি বলত, “আমার ভালোই কী আর মন্দই কী। কিন্তু, তোমাকে দেখবার লোক কি কেউ নেই। তোমার মা, তোমার বোন? ”
সে বলত, “আছে সবাই, কিন্তু আমাকে দেখে হবে কী। তারা কি আমায় চিরদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।”
কাঠকুড়নি বলত, “প্রাণ থাকে না বলেই তো প্রাণের জন্যে এত দরদ।”
তাপস বলত, “আমি খুঁজি চিরদিন বাঁচবার পথ। মানুষকে আমি অমর করব।”
এই বলে সে কত কী বলে যেত; তার নিজের সঙ্গে নিজের কথা, সে কথার মানে বুঝবে কে।
কাঠকুড়নি বুঝত না, কিন্তু আকাশে নবমেঘের ডাকে ময়ূরীর যেমন হয় তেমনি তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠত।
তার পরে আরো কিছু দিন যায়। তপস্বী মৌন হয়ে এল, মেয়েকে কোনো কথা বলে না।
তার পরে আরো কিছু দিন যায়। তপস্বীর চোখ বুজে এল, মেয়েটির দিকে চেয়ে দেখে না।
মেয়ের মনে হল, সে আর ঐ তাপসের মাঝখানে যেমন তপস্যার লক্ষ যোজন ক্রোশের দূরত্ব। হাজার হাজার বছরেও এতটা বিচ্ছেদ পার হয়ে একটুখানি কাছে আসবার আশা নেই।
তা নাই-বা রইল আশা। তবু ওর কান্না আসে; মনে মনে বলে, দিনে একবার যদি বলেন ‘কেমন আছ’ তা হলে সেই